ডেস্ক রিপোর্ট :
আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধীর ভাতা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস’ নামক একটি সংগঠন।
শুক্রবার (১ এপ্রিল) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ অংশ নিয়ে দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এই কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
দাবিগুলো হলো- ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করতে হবে। জাতীয় বাজেটেই শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা, উভয়ই নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
জাতীয় বাজেটেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়োগে ৫ শতাংশ কর ছাড়ের নিয়মটি সংশোধন করে আনুপাতিক হারে ৫-৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী কর্মী নিয়োগ দিলে ৩-১ শতাংশ কর ছাড়ের বিধান করতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি যাবতীয় সেবার তথ্যভান্ডারে প্রতিবন্ধিতা বিভাজিত তথ্য চাই। অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া দাবি জানানো হয়।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের নেতারা একত্রিত হয়ে এই মানববন্ধনের ডাক দেন। তারা বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে ২০০০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও তা ৭৫০ টাকায় আটকে আছে। বারবার বাজেটে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ রাখার কথা বলা হলেও সরকার তা গ্রাহ্য করছে না।
প্রতিবন্ধীর অধিকার ও সুরক্ষা আইনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চাকরি চলে যাওয়া, চাকরির বাজারে প্রতিবন্ধী মানুষের সুযোগ আরও কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি মিলিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষের আজ নাভিশ্বাস অবস্থা। সবদিক বিবেচনায় বাজেটে সরকারি বরাদ্দ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ এই মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়।
সামনে যেহেতু বাজেট ঘোষণা হবে তাই তারা মনে করেন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের এটাই উপযুক্ত সময়। এই মানববন্ধনটি একযোগে খুলনা, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, রাজবাড়িসহ আরও অন্যান্য জেলায়ও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সামাজিক সুরক্ষায় একজনকে একটির বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না বলা হলেও বক্তারা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা, উভয়ই দাবি করেন। দুটি ভাতার একটি জীবনধারণের জন্য, অন্যটি জ্ঞান অর্জনের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ, ব্যক্তিগত যানবাহন, ব্যক্তিগত সহায়তাকারী, বিশেষ শিক্ষা উপকরণ, শ্রুতিলেখক, নিয়মিত ওষুধ সেবন, থেরাপি গ্রহণ, বিশেষ প্রশিক্ষণ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। তাই উভয় ভাতাই তাদের প্রয়োজন।
বক্তারা আরও বলেন, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা সম্পন্ন ও বৈষম্যহীন জীবনের লক্ষ্যে অবিলম্বে আমাদের নাগরিক অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে রাস্তায় বসে পড়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। প্রয়োজনে আমরা আরও জোরদার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
পিএনএসপির সভাপতি এম ওসমান খালেদ (ইশারা ভাষায় দোভাষীর সহায়তায়), জাতীয় ফোরামের নির্বাহী সদস্য মনসুর জামান খান, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সভাপতি সাবরিনা সুলতানাসহ কয়েকটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
এমওএস/এমআরএম/জিকেএস