বিনোদন ডেস্ক :
আসছে ঈদে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী তাজ সিনেমা হল চালু হচ্ছে। এতে মুক্তি পাচ্ছে নায়ক শাকিব খানের সিনেমা। দুই বছর পর সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে পারবেন নওগাঁবাসী।
এক হাজার আসন বিশিষ্ট সিনেমা হলটি চালু করতে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। গত দুই বছর পূর্বে তাজ হলে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া প্রদর্শিত ছবি ছিল ‘সম্রাট’।
জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় ২২টি সিনেমা হল ছিল। এরমধ্যে- নওগাঁ সদরে তাজ, মুক্তি ও রুবি সিনেমা হল, রানীনগরে শাহী সিনেমা হল, আত্রাইয়ে শাপলা সিনেমা হল, বদলগাছীতে শাহিন ও স্মৃতি সিনেমা হল, মহাদেবপুরে বুলবুল টকিজ ও আত্রাই টকিজ, মান্দায় আশা, ফাইভ স্টার ও চলন্তিকা সিনেমা হল, পত্নীতলায় রংধনু, রাসমনি ও বিনোদন সিনেমা হল, ধামইরহাটে পারভীন ও মল্লিকা সিনেমা হল, নিয়ামতপুরে পালকি সিনেমা হল, পোরশায় রজনীগন্ধ ও মিতালী সিনেমা হল এবং সাপাহারে উল্লাস ও নসীব সিনেমা হল।
তাজ সিনেমা হল ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ এবং অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২ বছর থেকে তাজ সিনেমা হলেও শো চালানো বন্ধ ছিল। আবারও শাকিব খানের ‘বিদ্রোহী’ ছবি দিয়ে ঈদের দিন বেলা সাড়ে ১২টায় শো চালু হবে।
আবারও যদি দর্শকনন্দিত সিনেমা নির্মিত হয় এবং হলের পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে দর্শক হলমুখী হবে বলে আশাবাদী।
তাজ সিনেমা হলের ম্যানেজার রিপন কুমার কুন্ড বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর থেকে এক হাজার আসন বিশিষ্ট হলটি বন্ধ ছিল। ঈদ-উল ফিতরে ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা দিয়ে আবারও হলটি চালু করার অনুমোতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের পাশাপাশি রংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া চেয়ারগুলো মেরামত করা হচ্ছে।
ঈদের আগেই ‘শো’ চালানোর জন্য সবকিছু প্রস্তুত করা হবে। ঈদের দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ‘শো’ শুরু করা হবে। এদিন আরো দুইটা দুপুর ৩ টা ও সন্ধ্যা ৬টায় শো চালানো হবে। তবে দর্শক বাড়লে রাত ৯টায় আরেকটা শো চালানো হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৭ বছর ধরে হলটিতে চাকরি করছি। এক সময় সিনেমা হল খুবই জাকজমকপূর্ণ ছিল। ভাল ছবি দেখার জন্য দর্শকরা ভিড় করতো। ২০১০ সাল পর্যন্ত তাজ সিনেমা হল ভালোই চলছিল। এরপর ধীরে ধীরে এটা লোকসানের মুখে পড়ে। ভাল সিনেমা অভাবে আগের মতো আর হল চলে না।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ইতিহাস গবেষক প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খাঁন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী তাজ সিনেমা হলটি চালু হতে যাচ্ছে শুনে ভাল লাগছে। বর্তমানে যুগে হাতে হাতে স্মার্টফোন হওয়ায় অনেকেই সিনেমা দেখতে হলমুখী হচ্ছে না। এক সময় দর্শকে হল পরিপূর্ণ থাকতে। কিন্তু এখন কেন হল ফাঁকা?
অর্থাৎ আমরা ভাল সিনেমা না পাওয়ায় হলমুখী হচ্ছি না। যখন চলচিত্র মানুষের কথা বলবে, দর্শকরা নিজেদের কথা বুঝতে এবং আনন্দ পাবে এমন সিনেমা আমরা দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা ছোট ছিলাম সিনেমা হলের পরিবেশ সুন্দর ছিল। ভাল মানের এবং স্বপরিবারে দেখার মতো সিনেমা ছিল। যা দেখে আমরা আনন্দ পেতাম এবং উপভোগ করতাম। শুধু সিনেমা দিয়েই সিনেমা হল চালু থাকবে না, সিনেমা হল চালু রাখবে দর্শকরা।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক কায়েস উদ্দিন বলেন, ‘সিনেমা শিল্পটি আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ভাল সিনেমা তৈরীর অভাবে দর্শকরা হলে আসছে না। আবার সিনেমা মুক্তি পেলেই প্রযুক্তির যুগে ইউটিউব বা অন্য মাধ্যমে আগেই দেখতে পাচ্ছে। এ কারণে হলে গিয়ে দীর্ঘসময় কষ্ট করে সিনেমা দেখতে দর্শকরা আগ্রহী না। তবে আশাবাদী আবারও যদি দর্শকনন্দিত ভাল সিনেমা নির্মিত হলে দর্শক হলমুখী হবে। এছাড়া সিনেমাগুলো দর্শকদের জন্য আরামদায়ক হতে হবে যেন দীর্ঘ সময় হলে বসে থেকে বিরক্তবোধ না হয়।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতা জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, ‘সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারা ও চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মানবিক গুনাবলি বিকোষিত হয়। সিনেমা বা চলচিত্র মানুষের মননজগতে গুণাবলী বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ঘরে বসে সিনেমা, নাটক দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সিনেমা হলকে নতুন করে চালু করা খুবই দুরুহ কাজ। তারপরও আমরা মনে করি যদি সুস্থ ধারার চলচিত্র নির্মিত হয় যার মধ্য দিয়ে মানুষ সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় লক্ষ্য করছি কিছু সিনেমার নামে অশ্লীলতা, নোংরামি, পুঁজিবাদী ও মুনাফালোভী তৈরি হচ্ছে। এখান থেকে সিনেমাকে মুক্ত করতে হবে। যেখানে থাকবে জীবন ঘনিষ্টতা। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও লড়াই-সংগ্রাম এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন মানুষ উদ্বৃদ্ধ এবং উপকৃত হয়।’
নওগাঁ জেলা তথ্য অফিসার আবু সালেহ মো. মাসুদুল ইসলাম বলেন, ‘আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে তাজ সিনেমা হলটি ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। জেলায় একসময় ২২টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে একমাত্র ‘তাজ সিনেমা’ হলটি রুগ্ন পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় সিনেমা হলে ছবি দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ছিল। বর্তমানে অল্প পরিমাণ সিনেমা রিলিজ হচ্ছে। এছাড়া গল্পগুলো মানসম্মত ও আর্কষনীয় না। এখন হলগুলোতে বসে সিনেমা দেখার তেমন পরিবেশ নাই। ভালো মানের ছবি না হওয়ার কারণে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সিনেমা হলের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সিনেমা হলগুলো টিকিয়ে রাখতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারমধ্যে ঋণের মাধ্যমে আধুনিক মানের ডিজিটাল সিনেমা হল তৈরি করা। যেখানে প্রজেক্টর ও ভাল সাউন্ডসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মাধ্যমে সিনেমা হল তাদের কার্যক্রম শুরু করলে আমার মনে হয় দর্শকরা আবার সিনেমামুখী হবে।’
আব্বাস আলী/এলএ/জেআইএম