এক আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে দেশের আধ্যাতিক রাজধানী খ্যাত হযরত শাহজালাল রঃ ও হযরত শাহপরান রঃ সহ ৩৬০ আউলিয়ার পদধুলিতে ধন্য পূণ্যভূমি সিলেট। গত ক’দিন ধরে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই আতঙ্কিত মানুষ । কিছুদিনের ব্যবধানে বারবার ভূকম্পনের ফলে এক ভীতিকর পরিবেশ পরিস্থিতিতে অতিক্রান্ত হচ্ছে নাগরিক যাপিত জীবন ।২৯ মে ভূমিকম্পের পর থেকেই সিলেটজুড়ে ভূমিকম্প আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিশেষ করে উঁচুতলায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে বেশি ছড়িয়েছে ভূমিকম্পের আতঙ্ক । ভূমিকম্পের আঘাতে সুরম্য অট্রালিকায় গুলোতে মৃত্যু ঝঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশি। সিলেট ভূকম্পন প্রবণ এলাকা রেডজোন হওয়ায় এবং ঘনঘন ভূকম্পন অনূভুত হওয়ায় এবারে জেলার সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৯ মে একনাগাড়ে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জেলায় ৬ বার ভূকম্পন আঘাত হানে যদিও সেসব আঘাত রিখটার স্কেল সহনীয় মাত্রার ছিলো।তবুও নগরীর পাঠান টুলায় দুটো পাঁচতলা পাশাপাশি বিল্ডিং একটি আরেটির দিকে দুই ফুট করে হেলে পড়ে। এরপর অনেকে শহর ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে বাসা বদল করছেন উঁচু ফ্ল্যাট ছেড়ে একতলা ঘর খোঁজছেন। আতঙ্কের বড় কারণও রয়েছে এখানে অপরিকল্পিত নগরায়ন বিল্ডিিংকোড অনুস্বরণ না করা এরজন্যে অনেক বেশি আতঙ্কের নগরী হয়ে উঠেছে। সিলেট শহরে রয়েছে অসংখ্য ঝুকিপূর্ণ ভবন। গত পাঁচবছর ধরে সিটি কর্পোরেশন ঘোষিত ২৫ টি ঝুকিপূর্ণ ভবনের একটি ভবন এখন ও পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। ঘটনা ঘটলেই হাঁকডাক জোর তৎপরতা। তারপর নতুন ঘটনার আড়ালে হারিয়ে যায় পুরুনো
জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ বানিজ্যিক ভবন ও বাসা বাড়ীর মালিকদের বারবার নোটিশ করার পরও মালিকপক্ষ তা কানে তুলছে না। ফলে দিনদিন ঝুঁকি এবং আতঙ্ক দু’টোই বাড়ছে । এদিকে রেডজোন খ্যাত সিলেটে প্রতিদিনই বাড়ছে অট্টালিকার সংখ্যা কিন্তু মানা হচ্ছেনা যথাযথ বিল্ডিংকোড, ভূকম্পন সহনীয় মাত্রার যথাযথ নিয়ম নির্মাণ প্রযুক্তি। ২৯ শে মে’র পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নগরীর কেন্দ্রস্থল বন্দরবাজারে মধুবন সুপার মার্কেট, সময়বায় ভবন । জিন্দাবাজার মিতালী ম্যানশন রাজা ম্যানসনসহ প্রায় সাতটি বানিজ্যিক সেন্টার। খোলা রয়েছে আগুনে পোড়া মহাজনপট্রি কাষ্টঘরে তিনবার ভেঙ্গে ফেলার নোটিশ প্রাপ্ত আল খাজা মার্কেট। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ও জেলাপ্রশাসকের নির্দেশ সিটি কর্পোরেশনের বারংবার নোটিশ অমান্য করে আল খাজা মার্কেট মালিকপক্ষ বহাল তবিয়তে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এতসব নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে।মহাজনপট্রির ব্যবসায়ী আব্দুল কাহার বলেন কি এক অদৃশ্য কারণে আল খাজা মার্কেট প্রশাসনের সকল উদ্যোগ থেমেনআছে তা আমাদের জানা নেই। আল খাজা মার্কেট ভাঙার দাবীতে মেয়র, কমিশনার, মানবাধিকার নেতা স্থানীয় অধিবাসী বারবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আবার দুদফা ভূমিকম্প অাঘাত হানে সিলেটে বেশ ক’টি বিল্ডিংয়ে বড় ধরণের ফাটল তৈরী করেছে এরমধ্যে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ দেড় শতাধিক বছরের পুরনো বিদ্যাপীঠ রাজা জিসি হাই স্কুলের নতুন একটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই ভবনের নাম ‘কামরান ভবন’। সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীতে ৩.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এ ফাটল দেখা দিয়েছে।
এরপর রাজা জিসি হাই স্কুলের ফাটল ধরা সেই ভবনটি পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এসময় মেয়র আরিফ বলেন, হাই স্কুলের ফাটল ধরা সেই ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এই ভবনের পিছে একটি বড় পুকুর ছিলো উল্লেখ করে মেয়র আরিফ বলেন, এই স্কুলসহ নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভবন ও মার্কেট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আজ (বুধবার) বিকেলে আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যালয়ে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সে বৈঠকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভবন ও মার্কেটগুলো দ্রুত পরীক্ষা করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলম জানান, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন ছোট ছোট ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ফলে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন হিসেবে পরিচিত সিলেটে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাই সবাইকে সতর্ক থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে হবে বললেন তিনি।
৷