ডেস্ক রিপোর্ট :
২০১৮ সালে ঘোষিত মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬ হাজার টাকা ও দৈনিক ৬১৫ টাকা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম।
শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে টিইউসি জেলা সভাপতি ও জাহাজভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত এ দাবি জানান।
এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে জাহাজভাঙা শিল্পে রাতে শ্রমিকদের কাজ করানো হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়। একইসঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডের মাদাম বিবির হাট এলাকার একটি শিপ ইয়ার্ডে কর্মরত অবস্থায় লোহার পাত পড়ে সুজন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুকে অসুস্থতাজনিত মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে ২০-২৫ হাজার শ্রমিক সরাসরি জড়িত। আরও ৫০-৬০ হাজার মানুষ পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। এ সেক্টরের কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। ২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে দুর্ঘটনায় মোট ৯৭ জন শ্রমিক নিহত ও ১২৭ জনের অধিক শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রতি বারই দুর্ঘটনার কারণ, নিহত ও আহত শ্রমিকদের সংখ্যা ও আহতদের অবস্থান নিয়ে মালিক পক্ষের লুকোচুরি খেলা চলে।
১ ফেব্রুয়ারি একটি শিপ ইয়ার্ডে সুজন নামের এক শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমনকি গঠিত তদন্ত কমিটি শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেনি। অন্যদিকে, ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হলেও এখনও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ব্যাপারে কোন তথ্য শ্রমিক সংগঠন হিসেবে আমরা পাচ্ছি না।
জাহাজভাঙ্গা শিল্প সেক্টর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর অধীনে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো সুবিধা জাহাজভাঙ্গা শ্রমিকরা পায় না বলে অভিযোগ করা হয়।
বক্তব্যে বলা হয়, শ্রমিকদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়না। ২০১৮ সালে ঘোষিত মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি মাসিক ১৬ হাজার টাকা ও দৈনিক ৬১৫ টাকা ধার্য করা হয়েছে। মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর করা শ্রম আইনের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক হলেও মালিকেরা তা মানছেননা। এ সেক্টরে কর্মরত কোনো শ্রমিক বেতন, ছুটি তথা নৈমিত্তিক, পীড়া, অর্জিত, উৎসব বা সাপ্তাহিক ছুটি পায়না। অস্থায়ী ভিত্তিতে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে বিধায় শ্রমিকরা আহত বা নিহত হলে অনেক ইয়ার্ড মালিক শ্রমিকদের দায়ও নেয়না।
অন্যদিকে রাতের বেলায় ইয়ার্ডে কাজ না করার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মালিকরা তাও মানছেননা। শ্রমিকরাও বেশি মজুরির আশায় রাতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে পুরোনো পরিত্যক্ত জাহাজ রিসাইক্লিং সংক্রান্ত ২০০৯ সালের হংকং কনভেনশনে নেওয়া প্রস্তাবে উল্লেখ আছে প্রতিটি পরিত্যক্ত জাহাজ বর্জ্যমুক্ত করে রিসাইক্লিং করতে হবে। কিন্তু ইয়ার্ড মালিকরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করা হয়। এতে পরিত্যক্ত জাহাজে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ যেমন- সিসা, পারদ, ক্রোমাইটস ও এসবেস্টস পরিবেষ্টিত পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। এতে তাদের ফুসফুসের নানারকম জটিল রোগসহ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সফর আলী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান প্রমুখ।
ইকবাল হোসেন/একেআর/জেআইএম