ডেস্ক রিপোর্ট :
কপালে টিপ পরায় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ড. লতা সমাদ্দারকে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তির গালিগালাজ ও আঘাত করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেকে। এ নিয়ে শাহবাগ, ধানমন্ডি ও ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে বিক্ষোভ করেছে নারীপক্ষ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগসহ একাধিক সংগঠন।
রোববার (৩ এপ্রিল) সংসদে সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমেও আলোড়ন তৈরি করেছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের টিপ পরা ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন।
এ ঘটনার পর মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদকারীরা এ ঘটনাকে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর আঘাত, বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত, নারীর স্বাধীনতার উপর আঘাত বলে মন্তব্য করছেন। নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে নারীকে আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র মেনে না নেওয়ার ঘোষণাও দিচ্ছেন তারা।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, একজন মানুষ কী পোষাক পরবে এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্রের কাজে নিয়োজিত একজন পুলিশ তার পোষাক পরা অবস্থায় একজন নারীকে প্রকাশ্য দিবালোকে নিপীড়ন আইন-শৃঙ্খলার বিপজ্জনক চিত্র তুলে ধরে। একজন সরকারি কর্মচারী তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা চিন্তা রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের উপর চাপাতে পারেন না।
তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি করেন।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নারীপক্ষ। সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক তামান্না খান পপি বিবৃতিতে বলেন, কপালে টিপ মেয়েদের সাজসজ্জার অংশ। এছাড়া হিন্দু বিবাহিত নারীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রীতি অনুযায়ী কপালে টিপ পরে থাকেন। এতে বাধা দেওয়া বা টিটকিরি করা অথবা তার উপর কোনো রকম সহিংস আচরণ করা নারীর নিজ পছন্দ মাফিক সাজসজ্জা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা। এটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ধর্মান্ধ ও নারী স্বাধীনতাবিরোধীদের এক গভীর ষড়যন্ত্র এবং নিরবচ্ছিন্ন অপতৎপরতা।
অনলাইনে এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন দল ও মতের মানুষ। ফেসবুকে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অপু উকিল লিখেছেন, টিপের সঙ্গে এই উপমহাদেশের অনেক প্রাচীন সম্পর্ক রয়েছে। আমি কপালে টিপ পরতে খুব ভালোবাসি। শুধু ভালোবাসাই নয়, আমি বিশ্বাস করি, টিপের সঙ্গে আমার সংস্কৃতি এবং আস্থা জড়িয়ে রয়েছে।
নারী নেত্রী লাকী আক্তার লিখেছেন, ধীরে ধীরে একটি কট্টর অবস্থানের দিকেই ঝুঁকছে বাংলাদেশ। নানা মাত্রিক লড়াইয়ে আমাদের থাকতে হয়। থাকতে হবেই। ওই পুলিশকে খুঁজে বের করে তার শাস্তি দাবি করছি। রাজনৈতিক লড়াই এবং সাংস্কৃতিক লড়াই সমান তালেই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।
লেখক অদিতী ফাল্গুনী গায়েন লিখেছেন, বাঙালি মুসলমান সমাজে নারীরা আগে হিজাব পরতো না। আমার মা আধুনিকা ছিলেন। ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে। মুক্তবেণী পিঠের পরে লোটে- এ সাজেই তাকে দেখেছি শৈশবে-কৈশরে। আমার নানি দাদি কেউই হিজাব পরতেন না। মাথায় ঘোমটা দিতেন। তখন হিন্দু মুসলমান সব নারীরা অবগুণ্ঠনবতী ছিলেন। নানি বলতেন বিয়ের পর তিনি মসুরের ডালের বিন্দু টিপ দিতেন। কাঁচ পোকার টিপ দিতেন বীরভূমে থাকতে। হিজাব এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৯৭৫ এর পর। এই হিজাবে কপাল ঢাকা থাকে। টিপ পরার অবকাশ নেই। প্রাচ্য সংস্কৃতি মতে ললাটে তৃতীয় নয়ন থাকে। তৃতীয় নয়ন মানে মনের চোখ। আসলে মানুষ সেই চোখেই বেশি দেখে। হিজাব সেই মনের চোখকে ঢেকে রাখে।
এসএম/এমএইচআর