ডেস্ক রিপোর্ট :
দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা ট্রাকচালকদের কাছে ভোগান্তির আরেক নাম ছিল জাজিরা-মাওয়া ফেরিঘাট। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দিনের বেলায় ফেরি পার হতে দীর্ঘ সারিতে পড়তো। ফলে অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক রাতে ফেরি পার হওয়ার চেষ্টা করতো। পচনশীল পণ্য নিয়ে রাতেও এসব ট্রাকের চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তাদের সেই ভোগান্তি এখন অতীত। কয়েক মিনিটেই এখন উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন তারা।
রোববার (২৬ জুন) সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিনে দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা বহু ট্রাক পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। তাদের সবার কণ্ঠে ছিল স্বস্তির সুর। চোখে-মুখে ভিন্ন আমেজের ছাপ স্পষ্ট।
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে বেশ কয়েকজন ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা অতীতের ভোগান্তির গল্প শোনান। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই ভোগান্তি এখন দূর হয়েছে। এতে বেজায় খুশি তারা।
ভোলার চরফ্যাশন থেকে আসা ট্রাকচালক তারেক বেঙ্গল প্রেস’কেকে বলেন, ‘আগে রাইত ছাড়া ফেরি পাইতাম না। পদ্মা সেতু খুলে দিছে, কয়েক মিনিটে পার হইয়া যামু। টাকা খুব বেশি না। কষ্ট দূর হইছে, এইটা বড় কথা।’
ফরিদপুর থেকে আসা ট্রাকচালক মোহাম্মদ রফিক মিয়া বলেন, ‘ট্রাক নিয়ে প্রায়ই রাইতে ফেরিতে উঠুন লাগতো। এহন দিনে কয়েক মিনিটেই পার হমু। ফেরিতে গেলে দীর্ঘ লাইন থাকতো। এখন সেই পথ একটানে গাড়ি চালিয়ে চলে যাবো। রাতের জন্য আর অপেক্ষা করতে অইবো না।’
ঝিনাইদহ থেকে আসা ট্রাকচালক মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘সবজি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাবো। আগে ফেরি দিয়ে পার হতাম। গাবতলী গিয়ে থাকতে হতো। তারপর সেখান থেকে যেতাম নারায়ণগঞ্জে। এখন দ্রুত নদী পার হয়ে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ চলে যাবো।’
একই জেলা থেকে ফুলকপি নিয়ে আসা মো. সোহাগ বলেন, ‘আজকেই প্রথম এই রুটে আসলাম। কত ঘণ্টা লাগে জানি না। মাদারীপুর থেকে কুমিল্লা যেতে আগে সারাদিন লেগে যেতো।’
মাদারীপুর থেকে আসা আরেক ট্রাকচালক মো. নিয়ামুল বলেন, ‘পুরান ঢাকার বাবুবাজার যাবো। আগে ফেরিতে উঠতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যেতো। আজ ব্রিজের ওপর দিয়ে নদী পার হবো। নদী পারাপারে কোনো অপেক্ষা নাই।’
এদিকে, প্রথম দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। দিনভর যে যান চলাচল করেছে, তার ৬০ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। এরপরই ছিল প্রাইভেটকারের আধিক্য। তবে এদিন হাজারের বেশি ট্রাক, যাত্রীবাহী বাসও চলাচল করেছে।
সোমবার ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। রোববার (২৬ জুন) রাতে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করেছে সেতু বিভাগ। তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে সেতু বিভাগের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার স্বপ্নের দুয়ার খুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতুর। ওইদিন প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে টোল দেন।
এরপর তার গাড়িবহর সেতু উদ্বোধনের জন্য ফলকের স্থানে যায়। প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিরা গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে প্রথমে মোনাজাত করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মোনাজাত পরিচালনা করেন।
পরে দুপুর ১২টার একটু আগে সুইচ টিপে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন তিনি। এর মাধ্যমেই খুলে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের সড়ক পথের দ্বার।
আরএসএম/এএএইচ