ডেস্ক রিপোর্ট :
ভোলার মনপুরার বাসিন্দা আকাশ। চার মাস আগে মাকে হারিয়েছে ১৫ বছরের এ কিশোর। ঈদের দিনে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে বের হয় সে। সঙ্গে ছিল সমবয়সী খালাতো ভাই মনির (১৫) ও তার অন্য দুই বন্ধু। পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তারা। এতে গুরুতর আহত হয় আকাশ ও মনির। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আকাশের মাথায় গুরুতর জখম হয়। তার মাথায় ৩৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এখনো কথা বলতে পারছে না আকাশ। আর মনিরের দাঁত ভেঙে চোয়ালে ঢুকে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করার পর এখন চিকিৎসা চলছে। তাদের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত না।
শুক্রবার (১৩ মে) ঢামেকে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে আকাশ ও মনিরকে। তাদের দেখভাল করছেন আকাশের বাবা মো. হারুন। মা হারা ছেলে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায়। তার পাশে দিন-রাত কাটছে দরিদ্র বাবার। চিকিৎসায় অনেক খরচা হলেও গেলো ১১ দিন ধরে আয়-রোজগার বন্ধ। উপার্জনক্ষম বাবা-ছেলে কাজ করতে পারছেন না। ফলে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। তবে মাকে হারানো কিশোর ছেলেকে রেখে হাসপাতাল ছাড়তেও মন সায় দিচ্ছে না বাবা হারুনের।
তিনি বেঙ্গল প্রেস’কেকে বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব। বর্ষার চার মাস নৌকা চালাই। বছরের বাকি আট মাস রাজমিস্ত্রির কাজ করি। ওর (আকাশ) বয়স মাত্র ১৫ বছর। ঈদের দিনে সেমাইটুকুও খাওয়াতে পারিনি। ঘুরতে গিয়ে এ দশা! ১১টি দিন ছেলেটা একটা কথাও বলতে পারেনি। এলাকার হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে পরে ঢামেকে আসতেই ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখানে (ঢামেক) এসে বিভিন্ন টেস্ট করাতে অনেক টাকা লাগছে। নার্সরা কোনো সেবা দিলে বাড়তি টাকা দাবি করেন।’
শুধু আকাশ ও মনির নয়, ঈদে ঘুরতে বেরিয়ে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। উৎসব-আনন্দ মাটি হয়ে গেছে এসব পরিবারের। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তারা। সঙ্গে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন আহতদের পরিবার-পরিজনরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০১, ১০২, ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ তিনটি ওয়ার্ড এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা ছাড়াও গুরুতর আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢামেকে এসেছেন রোগীরা। বেড না পেয়ে অসংখ্য দুর্ঘটনার শিকার রোগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে যে ওয়ার্ডে, সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, ঈদের দিনে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের সবাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। ঈদের পরের কয়েকদিনও অনেক রোগী এসেছেন। অধিকাংশই ঘুরতে বেরিয়ে আহত। বয়সে তরুণ-যুবক এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত। রোগীর চাপ বেশি থাকায় মেঝেতেও জায়গা মিলছে না। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদেরও।
মুরাদ হোসেন নামে আরেক কিশোর এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে মুরাদ ঈদে আহত হয়নি। তিন মাস আগে রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় আহত হয় সে। তার বয়স ১৪ বছর। সংসার অভাব দূর করতে বাবা-মাকে ছেড়ে ঢাকায় এসেছিল সে। তিন মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই মাস ছিল আইসিইউতে।
মুরাদের বাবা আবু হানিফ বেঙ্গল প্রেস’কেকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। ছেলেটা আমার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। আমি মানুষের ক্ষেতে কামলা দেই। সংসারে অভাব থাকায় মুরাদকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ছেলেটার আজ এ অবস্থা। তিন মাস হলো হাসপাতালে। শরীর শুকিয়ে গেছে একেবারে। কথা বলতে পারে না ঠিকমতো।’
এএএম/এএএইচ/এএসএম