ডেস্ক রিপোর্ট :
গত দুইদিন নিউমার্কেট এলাকা ছিল রণক্ষেত্র। এখানে চলেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর সবই। এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক। নিহত হয়েছেন দুজন। সেই সঙ্গে পুড়েছে কারও কারও দোকান।
এর মধ্যে ঢাকা কলেজের বিপরীতে থাকা নূরজাহান সুপার মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়েছে। সেগুলোতে এখন চলছে রং লাগানো ও শার্টার মেরামতের কাজ। তবে মার্কেটজুড়ে ধোঁয়ার গন্ধ এখনও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে নিউমার্কেট এলাকার দোকানগুলো খুলতে শুরু করে।
এ বিষয়ে নূরজাহান সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সোহরাব বলেন, আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে মার্কেটের সবগুলো দোকান খুলে দেওয়া হবে।
নূরজাহান সুপার মার্কেটে ১ নম্বর গেটে থাকা ২০টির বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এভারগ্রিন ফ্যাশনের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, পানিতে দোকানের মাল ছাড়াও ইলেকট্রনিক বোর্ড, শার্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাল সরিয়ে দোকান মেরামতের কাজ করছি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে দোকান চালু করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ লাখ টাকার পণ্যের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি গত দুইদিন কোনো বেচাকেনা হয়নি। ঈদের মৌসুমে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটের নিচতলায় বেশিরভাগই মেয়ে ও শিশুদের জামা-কাপড়ের দোকান।
নূরজাহান মার্কেটের ১ নম্বর গেটে ঢুকতে ভস্মীভূত একটা দোকান চোখে পড়ে। যেখানে পার্টিশন দিয়ে তিনটি দোকান বানানো হয়েছে। এছাড়া গেটের বাইরে ফুটপাতে আরেকটি দোকান ছিল। এই চারটি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
এছাড়া ১ নম্বর গেট সংলগ্ন তিন সারিতে ২১টি দোকান পানি ও ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলোতে মেরামত এবং পণ্য সরানোর কাজ চলছে।
জাহাঙ্গীর নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর কোনো বেচাকেনা হয়নি। এর মধ্যে এই ঘটনা। ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবেন। সরকারের উচিত আমাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, আগুনের ধোঁয়া মার্কেটজুড়ে, ইলেকট্রিক কাজ চলায় এসি বন্ধ। কাস্টমাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঝামেলা হয়েছে নিউমার্কেটের খাবারের দোকানে। কিন্তু এই মার্কেটে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি চান তারা।
পলাশ ফ্যাশনের এক বিক্রয়কর্মী জানান, ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা এই কাজ করতে পারে না।
এর আগে সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এতে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক ডেলিভারিম্যান। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেলে মো. মুরসালিন (২৪) নামে আহত এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়।
পুলিশ বলছে, নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
এসএম/জেডএইচ/জেআইএম