ডেস্ক রিপোর্ট :
‘ধূমপানের মাধ্যমে মাদকও আসবে। তাই মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে ধূমপান বন্ধ করতে হবে। প্রতি বছর আমরা তামাকের কর বাড়ানোর বিষয়ে চেষ্টা করছি। এবারের বাজেটেও এ চেষ্টা করবো।’
শনিবার (২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ আয়োজিত গণমাধ্যমের সঙ্গে ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু।
তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আছে, কিন্তু আইনে ফাঁকফোকরও রয়েছে। ধূমপানের কারণে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শুধু সরকারি ও প্রশাসন দিয়ে এটা ঠেকানো যাবে না। আইন যেমন সংশোধন করতে হবে, তেমনই গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি আদিবা আনজুম মিতা বলেন, আমাদের গণমাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কর্মকাণ্ড বেশি প্রচার করতে হবে। তামাকের প্রভাবের কারণে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। তামাকের কারণে ফুসফুসে ক্যানসার, দাঁতের ক্যানসারসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। তাই তামাক আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে। তামাকের ওপর কর ও মূল্য বৃদ্ধিও জরুরি।
তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো তামাকপণ্য ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ৬১ হাজার শিশু ধূমপান না করেও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুবরণ করে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের এ ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সংসদ সদস্যদের এ উদ্যোগগুলো আমাদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করছে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এখন সিগারেট খাওয়ার হার আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে ধূমপানের হার বাড়ছে। আমাদের দেখতে হবে কীভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বিদ্যমান আইন যা আছে তা সংশোধন প্রয়োজন। আইনের ফাঁকফোকর যদি না থাকে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আমি মনে করি এ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দ্রুত কাজ করা দরকার। আইন সংশোধন করা দরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করা দরকার।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম মিঠু বলেন, বাংলাদেশে তামাকবিরোধী আন্দোলন চলছে, যা আমি সবসময় সমর্থন করি। এটা বন্ধ করতে পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সহায়ক হবে। তবে শুধু তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়। পাশাপাশি ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইস্যুও আমাদের দেখতে হবে। ঢাকার দূষিত হাওয়া, যেখানে-সেখানে থুথু ফেলাসহ সব স্থানে কম্প্রিহেনসিভ জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তার উপস্থাপনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিষয় সংযোজন জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ ও তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। বিভিন্ন সময়ে আমাদের এসব কার্যক্রমে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অংশ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছে, যা আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের প্রতিনিধিরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংস্থা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এএএম/একেআর/জেআইএম