ডেস্ক রিপোর্ট :
‘প্রতিদিন সকাল ১০টায় মেয়ের বাসায় যাই। রান্না করে সেই খাবার বাসায় নিয়ে আসি দুপুরে। এক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এরপর থেকে পরিবারের ছয়জনের জন্য পাশের এলাকায় মেয়ের বাসা থেকে রান্না করে আনতে হচ্ছে। আমার বাসায় একটা চুলা। প্রতি মাসেই বিল দিয়ে আসি। এ মাসের ১০ তারিখে বিল দিয়েছি। সেদিন রাত থেকেই গ্যাস নেই।
সোমবার (১৬ মে) সকালে বেঙ্গল প্রেস’কেের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজের পরিবার নিয়ে ভোগান্তির কথা বলেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা সোনাবানু (৬০)। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১০ মে) থেকে কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সে থেকে এখনো পাশের এলাকায় মেয়ের বাসা থেকে পরিবারের জন্য রান্না করে আনছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার অনেক বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। কেউ সিলিন্ডার কেউবা লাকড়ির চুলায় রান্না করছেন। আবার কেউ বা অন্য এলাকায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রান্না করে আনছেন।
দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সোনাবানুর এক হাতে কাপড়ে মোড়ানো পাতিল। অন্য হাতে কাগজে মোড়ানো রান্না করা খাবার। তিনি বেঙ্গল প্রেস’কেকে বলেন, নবাবগঞ্জে বড় মেয়ের বাসা থেকে রান্না করে খাবার নিয়েছি। আমাদের এলাকায় ছয়দিন ধরে গ্যাস নেই। আমাদের কোনো মাসের বিল বকেয়া নেই, তবুও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরে ২৬-২৭ বছর ধরে থাকেন সোনাবানু। ছেলে ও নাতি-নাতনি নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার। ছেলে বাবুল চাকরি করেন রাজধানীর গুলিস্তানের একটি মার্কেটে। আগে প্রতিদিন বাসা থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে যেতো। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না থাকায় তা আর দিতে পারছি না।
সোনাবানু বলেন, গত মাসেও ৯৭৫ টাকা গ্যাস বিল দিছি। যেদিন গ্যাস বিল দিয়ে এসেছি, সেদিন সন্ধ্যায় লাইন কেটে দিয়েছে। আমি একজন বৃদ্ধা প্রতিদিনই আমাকে পাশের এলাকায় মেয়ের বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসতে হয়। এর চেয়ে আর ভোগান্তির কি আছে?
চুলা কিংবা লাকড়ি দিয়ে রান্নার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এত টাকা নেই যে বাইরে থেকে প্রতিদিন খাবার কিনে খাবো। আবার এক কেজি কেরোসিন আগে ছিল ৯০ টাকা। দাম বাইড়া এখন ১১০ টাকা হইছে। একদিন রানলে পরের দিন শেষ হয়ে যায় তেল। লাকড়ির দামও অনেক। ১ কেজি লাকড়ি কিনতে ২০ টাকা লাগে। আগে লাকড়ি পড়ে থাকত তাও কেউ কিনত না আর এখন লাকড়ি পাওয়া যায় না। যেটা পাই সেটাও অনেক দাম।’
দ্রুত বৈধ সংযোগকারীদের গ্যাস দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম শুনছি গ্যাস লাইন নষ্ট হইছে এ কারণে গ্যাস নেই। এখন শুনছি অনেকেই গ্যাস বিল দেয় না। এ কারণে লাইন কাইটা দিছে। কিন্তু আমরা যারা গ্যাস বিল দিছি তাদের লাইনগুলো দ্রুত দিয়ে দিক এ আশা করছি।
অন্যদিকে, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ছয়দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় সোমবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এসময় তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগ দাবি করেন তারা। গত ১০ মে থেকে তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ওই এলাকার গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে।
আরএসএম/এমএএইচ/এমএস