আ ম ন জামান চৌধুরী সিলেট
দিনরাত সমান ঝরছে অবিরাম ধারায় বৃষ্টি গত ২৪ ঘন্টায় এক সেকেন্ডের জন্য থামেনি বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট সুনামগঞ্জে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি । পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। পর্যাপ্ত নৌকা ও উদ্ধারকর্মী না থাকায় পানিতে আটকা পড়া মানুষ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নৌকা ও উদ্ধার সরঞ্জামাদি না থাকায় জেলা প্রশাসক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সিলেটের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বরার চিঠি পাঠিয়েছেন। ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির । সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরে অনবরত প্রবেশ করছে । শহরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সিলেটের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আজ শুক্রবারের মধ্যেই পুরো সিলেট শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা বিদ্যুৎ সাব স্টেশনে পানি উঠে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই এলাকায় সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। উপশহর কেন্দ্রেও পানি উঠেছে। যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সবরাহ ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওই উপকেন্দ্র থেকে সারা সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে।
বিদ্যুৎ বন্ধের আশঙ্কায় শুক্রবার সকালে কুমারগাঁও ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বিউবোর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বরাত দিয়ে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম ইমন জানান, বিউবোর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন আর মাত্র ৪ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেলে কুমারগাঁও উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পুরো সিলেট শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
বিদ্যুতের পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও দেখা দেবে। তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি প্রবেশ বন্ধ ও পাম্প দিয়ে ভেতরের পানি সেচের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে মেয়র শ্রমিক ও পাম্পসহ সবধরণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যে কোনভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তিনি বিউবোর কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বন্যার কারণে অনেক স্থানে বিদ্যুতের লাইন ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও তার ছিড়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সিলেট শহরের একাংশ ছাড়া পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সবরাহ বন্ধ রয়েছে।এদিকে বন্যাকবলিত এলকার লোকজনদের জন্য ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তাতে সংকুলান হচ্ছেনা। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠার জন্যে অপেক্ষমান লোকজনের সংখ্যা প্রচুর।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি ও সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনদের দূর্ভোগ বেড়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর লাখের অধিক পানিবন্দী মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাত এগারোটায় সিলেট নগরীর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আশ্রয় নিতে আসা অনেক লোকজন জড়ো রয়েছেন। তবে এসএসসি পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত থাকায় স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে স্কুলের সামনের বারান্দায়, ভ্যানগাড়িতে অবস্থান করছেন মানুষ।শুক্রবার সকালে স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় সেখানে সিসিক কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা সম্ভব হয়নি। যে কারণে বন্যা কবলিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র অথবা নিরাপদ জায়গার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সিলেট নগরীর বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনদের দ্রুত আরও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।