ডেস্ক রিপোর্ট :
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম লালবাগে বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার এক একর জায়গা দখল করে রেখেছেন বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। এই দাবি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে পেশ করেন সংস্থার সভাপতি শাহাদাৎ আলম হারু চৌধুরী। এসময় বেদখল হয়ে যাওয়া ওই জমি উদ্ধার করে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন মন্ত্রী।
শনিবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগরে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আালোচনা সভা এবং শ্রবণ, বাক প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে অনুদান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে এসে জানতে পারলাম লালবাগে বধির সংস্থার বেশ কিছু (এক একর) জমি বেদখল হয়ে গেছে। বিজয়নগরে বধির সংস্থার জায়গাও বেদখল করার চেষ্টা হচ্ছে নানাভাবে। কীভাবে বধির সংস্থার জায়গা দখল করে একটু মাখন খাওয়া যায় এই পরিকল্পনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই, আমাদের সরকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার- দুর্বল মানুষের সরকার। বর্তমান সরকার আইনের সরকার, আমরা আইনের পথে কোনো বাধা সহ্য করবো না। লালবাগের জমি সমন্ধে আমি কাগজ দেখেছি। আমি এই জমি দখলমুক্ত করবো। আমি সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব) সঙ্গে কথা বলবো। এছাড়া জমি উদ্ধারের জন্য ঢাকার ডিসিকে বলা হয়েছে।
‘এখানে নানা ধরনের বাজার সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মামলাও নাকি আছে। মামলা থাকলে আমাদের জন্য অসুবিধা হয়। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমরা আইন মানি, গায়ের জোরে কোন কিছু করি না। আইনের মাধ্যমে অতি শিগগির লালবাগের জমি মূল মালিকের (বধির সংস্থা) কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
বধিরদের জমি দখলমুক্ত করে উন্নয়নের ঘোষণা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই জায়গায় আপনারা বললেন ৩০ তলা, ২৫ তলা বিল্ডিং করবেন। সেই জন্য আপনারা প্রকল্প তৈরি করতে চান। সরকার এটা করে দেবে। এটা সরকারের জন্য এমন কোনো বড় কিছু নয়। কারণ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা তৈরি করছি। এখানে ৩০০ কোটি অথবা ৪০০ কোটি টাকা লাগবে, এটা শেখ হাসিনার সরকারের জন্য বড় কিছু নয়। তবে বিষয়টা হলো এর পরিচালনায় সৎ ও দেশপ্রেমিক হতে হবে। আমাদের আওয়ামী লীগের লোকজন ও মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসী লোকজন যেন এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে পারবে। কিন্তু বেআইনিভাবে আমরা একটি টাকাও দিতে রাজি নই। আইনটা আপনাদের পরিষ্কার করতে হবে। আমার (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়) অফিসে আসেন কাগজপত্র নিয়ে, আমি সময় দেবো। প্রকল্প নিয়ে আসেন, অনুমোদন করে দেবো। প্রধানমন্ত্রী ও তার সচিবের সঙ্গে কথা বলবো। আমি এই বিষয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেবো। আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কাজ করি, আপনারা কল্যাণমূলক কাজ নিয়ে আসেন অনুমোদন করে দেবো। দরকার হয় আমাদের পরিকল্পনার যিনি প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) তার বরাবর কাগজ নিয়ে যাবো। বধিরদের উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদন হবে আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। তবে প্রকল্প কিন্তু সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ খেটে খাওয়া দুর্বলদের দেশ দাবি করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যারা অতি বড় বা ধনী লোকেরা আছেন- তারাতো আমেরিকা, কানাডা-ইউরোপে গিয়ে বসবাস করতে পারেন। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আয়ে দুর্বল, শিক্ষায় দুর্বল, গায়ে দুর্বল তাদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান এই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন এদেশের দুর্বলেরা শক্তিশালী হবে। আয়ে দুর্বল অথবা প্রতিবন্ধী যারা নানা কারণে এটার জন্য কেউ দায়ী নয়। তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। এটাই ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অন্যতম কারণ। কী প্রয়োজন স্বাধীন হওয়ার যদি আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই বোনেরা নিরাপদে-নিশ্চিন্তে বসবাস না করতে পারেন?
মন্ত্রী আরও বলেন, বিজয়নগরে বধিরদের এই জায়গায় ব্যক্তিগত কারণে অনেকবার এসেছি। এখানে হেঁটে ঘোরাফেরা করেছি, আড্ডা দিয়েছি। এই বধিরদের স্কুলটার সঙ্গে আমার খুব পরিচয় আছে, আগে থেকেই। আমি শুনে কষ্ট পেলাম বধিরদের জমি দখল হয়েছে। রাজনৈতিক কোন্দল, দলাদলির কারণে জমি বেদখল হয়েছে। এটা আমি হতে দেবো না।
অনুষ্ঠানে জাতীয় বধির সংস্থার সভাপতি শাহাদাৎ আলম হারু চৌধুরী বলেন, লালবাগের এমপি হাজী সেলিম বাংলাদেশ বধির সংস্থার এক একর জায়গা দখল করে নিয়েছেন। হাজী সেলিমের কাছ থেকে দুইবার দখলমুক্ত করেছি। তারপর আবারও জমি দখল করে নিয়েছেন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুইবার দখলমুক্ত করেছিলাম। আমরা জমিটা দখলমুক্ত করে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চাই বধির ভাই-বোনদের কল্যাণে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, জাতীয় বধির সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস খান রিপন প্রমুখ।
এমওএস/কেএসআর/জেআইএম