ডেস্ক রিপোর্ট :
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হাসান। তার বয়স ১৮। বাটা সিগন্যালে একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে কাজ করতেন তিনি। ছয় মাস আগে বিয়ে করেন নাহিদ।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের সামনে ছেলের মরদেহ নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন।
পরিবারের সঙ্গে নাহিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত
ছেলের ময়নাতদন্তের পর নিথর দেহ নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। একবার মর্গের সামনে আসছেন, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে আবার বাইরে যাচ্ছেন। এর ফাঁকে মেডিকেলের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। অনুরোধ করছেন- যেন একটু কম টাকায় সব ব্যবস্থা করে দেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাহিদের বাবা বেঙ্গল প্রেস’কেকে বলেন, ‘নাহিদ আমার বড় ছেলে। ওর বয়স ১৮। ছয় মাস আগে বিয়ে করেছে। আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। পয়সার অভাবে ছেলেটাকে বেশিদূর পড়াতেও পারিনি।’
স্ত্রীর সঙ্গে নাহিদ। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ‘ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে নাহিদ। এরপরেই তাকে কাজে দিয়ে দেই। ১০ বছর বয়সে ও নিউ সুপার মার্কেটে কাপড়ের দোকানে কাজ শুরু করে। অল্প বেতন পেতো। তবুও তখন থেকেই আমার হাতে পয়সা দিতো।’
নাহিদের বাবা নাদিম হোসেন ম্যাটাডোর কলম তৈরির একটি কারখানায় চাকরি করেন। বেতন খুবই স্বল্প। তিন ছেলে, স্ত্রী ও পুত্রবধূকে নিয়ে ছয়জনের সংসার। একার আয়ে সংসার চালানো দায়। এজন্য কুরিয়ারকর্মী কাজ নেন নাহিদ। বাবার সঙ্গে হাল ধরেছিলেন সংসারের।
নাহিদের নিথর দেহ নিয়ে ফিরছেন তার বাবা/ছবি: বেঙ্গল প্রেস’কে
নাদিম হোসেন বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) ইফতারের পর বাসায় বসেছিলাম। তখন নাহিদের বন্ধুরা ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে আমার কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে- নাহিদ কোথায়? আমি বলি- সে তো কাজে গেছে। তখন ওর বন্ধুরা আমাকে বলে নাহিদ ঢাকা মেডিকেলে। এরপর জানতে পারি আমার ছেলেটা মারা গেছে।’
নাদিমের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে। তিনি কামরাঙ্গীর চরে বিয়ে করেন। সেখানে বসবাস শুরু করেন। ফলে নানা বাড়িতে বড় হয় নাহিদ। তার আরও দুটি ছোট ভাই রয়েছে। তাদের একজনের বয়স সাত বছর এবং অন্যজনের বয়স তিন বছর।
এমআইএস/এএএইচ/এএসএম