কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ভিজিডি কার্ডের তালিকা নিয়ে আ.লীগ নেত্রী ও ভাইস-চেয়ারম্যানকে অশালীন আচরণ করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর এবার কলেজ ছাত্রকে বেদম প্রহারের অভিযোগ উঠেছে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টোর বিরুদ্ধে।
চেয়ারম্যানের প্রহারে আহত কলেজ ছাত্রের নাম তৌহিদুল ইসলাম (২০)। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে তাঁর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাইয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য পরিষদ ভবনে গেলে মারধর ও প্রহার করা হয় বলে দাবি করেন তৌহিদের পরিবার।
ভুক্তভোগী তৌহিদুল ইসলাম রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের আমতলিয়াপাড়ার আবদুল হাকিমের ছেলে এবং রামু সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর বাবা চেয়ারমানের বিচার মানেন নি বলে অভিযোগ তুলে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন চেয়ারম্যান নিজেই। মাটিতে তিনি লুটিয়ে পড়লে এসময় তাঁর বুকে উপর্যুপরি লাথিও মারে বলে অভিযোগ করা হয়।
চেয়ারম্যানের উত্তেজিত হওয়া, গালমন্দ করা ও মারধরের একটি অডিও রেকর্ডও এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের এ অডিও রেকর্ডে শুনা যায়, কলেজ ছাত্র তৌহিদ চেয়ারম্যানের কাছে জন্ম নিবন্ধন সনদ চাইলে তার (ছাত্র) পরিচয় জানতে চান। তৌহিদ পরিচয় দেওয়া মাত্রই চেয়ারম্যান তেলে বেগুনে জ্বরে উঠে বলেন- ‘তোমার বাপ আমার বিচার মানেনি, তাই তোমার নাগরিক অধিকার আমি দেবো না, পারলে আমার নামে মামলা করো।’ এক পর্যায়ে একটি বেত দেখিয়ে বলেন, ‘নাগরিক অধিকার ওইটা (বেত দেখিয়ে) দেবো যে।’ এই বলে কলেজ ছাত্রকে পিটাতে শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান। এসময় চেয়ারম্যান ওই ছাত্রকে উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল গালমন্দও করেন।
হামলার শিকার তৌহিদুল ইসলামের মা খুরশিদা বেগম জানান, ১৫ দিন পূর্বে ছেলেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জন্মনিবন্ধন সনদ নেয়ার জন্য ছেলেকে (তৌহিদ) পরিষদে পাঠান। কিন্তু বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অজুহাতে ছেলেকে জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ না দিয়ে ফেরত পাঠান। গত বুধবার, আবারো জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহের জন্য গেলে চেয়ারম্যান ছেলের সকল কাগজপত্র নিয়ে রেখে দেয় এবং পরদিন যেতে বলে। চেয়ারম্যানের কথা অনুযায়ী পরদিন বৃহস্পতিবার পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান ছেলের পরিচয় জানতে চান। এসময় পিতার নাম বলার সাথে চেয়ারম্যান চরম উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল গালমন্দ শুরু করেন এবং চৌকিদারকে দিয়ে বেত এনে ছেলেটিকে পিটাতে থাকেন। মারধরের এক পর্যায়ে ছেলেটি মেঝেতে পড়ে গেলে চেয়ারম্যান ছেলে তৌহিদের কোমরেও পা দিয়ে আঘাত করেন। পরে তৌহিদের সাথে থাকা তারেকুল ইসলাম, ফাইসাল ও আবদুল হক নামের ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
তৌহিদের মা আরও জানান, বিষয়টি তিনি বৃহস্পতিবার, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফাকে অবহিত করেন। এসময় ইউএনও রামু থানার ওসি’র সাথে কথা বলেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর রাতে তিনি এ ঘটনায় রামু থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে রাতে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো মারধরের কথা অস্বীকার করে জানান, এক ছেলে জন্মনিবন্ধন দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করছিলেন। আমি ব্যস্ততার কারণে অপারগতা প্রকাশ করি। কিন্তু তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘ওই কলেজ ছাত্র উস্কানী মূলক আচরণ করেছে আমার সাথে। সে পরিকল্পিতভাবেই আমার কাছে এসেছিল। তার বাবা এবং নানাও ভাল মানুষ নন। তারাও ঝগড়াটে।’
তবে থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ডিউটির কারণে বিষয়টি দেখার সুযোগ হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ঘটনা সত্য হলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ইউএনও।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি রামু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি কার্ডের তালিকা নিয়ে নারী উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আফসানা জেসমিন পপিকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন অভিযুক্ত ফাতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো।এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ভুট্টো পপিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেন। পরে ফোন দিয়ে তার ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকসহ বিভিন্ন লোকজন হাতে লাঠি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো করেন। এ নিয়ে সভায় চরম হট্টগোল হয়। পরে পুলিশ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয় উপজেলা প্রশাসন।
শাকিল/সাএ