প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরদিনই কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৬৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ভিড়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা একটি জাহাজ। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়া থেকে সাড়ে ৬৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সর্বশেষ জাহাজটি এসেছিল।
জানা গেছে, ৬৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে আসা এমভি থাউজেন্ড স্প্রিং নামে জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী। জাহাজটি ২২৯ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের (পানিতে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা)। ইন্দোনেশিয়ার তারানহা বন্দর থেকে জাহাজটি সরাসরি এসেছে মাতারবাড়িতে।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে জাহাজটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছেন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক জানান, আগে থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রয়েছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষণমূলক চালু হওয়া প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। কোন ধরণের ত্রুটি দেখা না দিলে চালু হওয়া প্রথম ইউনিটটিতে দৈনিক ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার চাহিদা রয়েছে। আর ত্রুটি দেখা দিলে উৎপাদনে কাঁচামালের চাহিদা কিছুটা বাড়ে। এতে কয়লার চাহিদা ৫০০ থেকে ১০০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়ে।
জানা গেছে, ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে এখন নিয়মিত ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
জাপান সরকারের সহায়তায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাঁচামাল বহনকারী জাহাজ ভেড়াতে একটি চ্যানেল খনন করে সিপিজিসিবিএল। চ্যানেলটি ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার প্রশস্ত এবং ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীর। বাংলাদেশে এখন এটি সবচেয়ে গভীর চ্যানেল। এছাড়া সিপিজিসিবিএল সেখানে একটি জেটিও নির্মাণ করে। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঁচামাল নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার একটি জাহাজ ভেড়ার মধ্য দিয়ে চ্যানেল ও জেটি চালু হয়।
সিপিজিসিবিএল কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত তিন বছরে ১২০টি জাহাজ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে জেটিতে ভিড়েছে। এর মধ্যে ১০টি কয়লাবাহী জাহাজ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিজার্ভারে এখন প্রায় ৮ লাখ মেট্রিকটন কয়লা মজুত আছে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন অন্তঃত ৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লার প্রয়োজন হয়।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের শুরুতে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জেটি এবং ১৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটসহ (জাহাজের নীচের অংশ) ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি বহুমুখী জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। একইসঙ্গে একটি কনটেইনার ইয়ার্ডসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাও নির্মাণ হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির অদূরে ও সাগর উপকূল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে নির্মাণ হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নির্ধারিত ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। আর সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে অন্তঃত ১৫ মিটার গভীরতা বা ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে প্রবেশ করতে পারবে। ৮ থেকে ১০ হাজার কনটেইনার এবং এক লক্ষ টন কার্গো নিয়ে এখানে জাহাজ ভিড়তে পারবে।
উল্লেখ্য, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে চ্যানেলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন সেই চ্যানেলকে কেন্দ্র করেই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বন্দর।
শাকিল/সাএ