জীবিত অবস্থায় আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় প্রতিদিন শিক্ষক সমিতি নানান দাবি নিয়ে বাবাকে চাপ প্রয়োগ করতেন। শিক্ষকেরা এমন হতে পারেন আমার জানা ছিল না। বেঁচে থাকা অবস্থায় আমরা যেসব মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেছি সেটা আসলে অবর্ণনীয়।
বাবা আইসিউতে গিয়েছেন মাত্র একদিন হয়েছিল তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমি জানতে পারি বাবা ৫দিন ধরে আইসিউতে আছেন এমন একটি সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এটাত এক প্রকার এমন বিষয় যে বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায়ই বাবাকে মেরে ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শেষের দিকে বাবা যেসব নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেগুলোর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷ তার মানে আপনারা আপনাদের ভিসি স্যারকে বিশ্বাস করেন না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ফোন দিয়ে চার্জ করা হয়েছে, যে উনার আসলে কি অবস্থা। তারপরও আমি কিছু বলতে চাইনি কারণ এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল সমান হয়না। তবে এমন অসুস্থ মানসিকতার শিক্ষকদের মধ্যেও কিছু ভালো মানুষ ছিলেন যারা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। যারা সহযোগিতা করেছেন তখন আমাদের আমি তাদের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো মন থেকে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শোকসভার আয়োজনে এই সব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়ত উপাচার্যের মেয়ে তাসলিম হক মোনা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রায়ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের মৃত্যুতে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের স্মৃতি রক্ষার্থে নানা রকমের প্রস্তাব উঠে আসে শোকসভার আলোচনায়। এ সময় প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক-এর একমাত্র সন্তান তাসলিম হক মোনা এবং উপাচার্যের সহধর্মিনী নুরুন নাহার বেগম উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভার আলোচনা বক্তারা বলেন, মাননীয় উপাচার্য আজ আমাদের মাঝে না থাকায় অবিভাবকহীন হয়ে গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র আড়াই বছরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করেছে তা অকল্পনীয়। উপাচার্য যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবনে বেঁচে থাকে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সে দাবি জানানো হয় আলোচনা সভা থেকে। সে জন্য প্রয়োজনে উপাচার্যের নামে একটি ভবনের নামকরণ করার প্রস্তাব করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক একজন আত্নমর্যাদা সম্পন্ন এবং একাধারে দক্ষ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। সহকর্মীদের প্রতি তাঁর সম্মানবোধ অনুকরণীয় ছিল। অনেক বিষয়েই দ্বিমতের মধ্যদিয়ে শুরু হলেও উপাচার্যের দক্ষতায় সমঝোতায় তা শেষ হতো।”
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যতজন উপাচার্য দেখেছি তারমধ্যে অধ্যাপক ইমদাদুল হক স্যার কে সকলের থেকে আলাদা করা যায়। তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত। স্যার বিদ্যালয়ের উন্নতি অগ্রযাত্রার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু জীবনের অন্তিম মূহুর্তে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ হতে তার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। আমি চাই স্যার আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকুক। তাই তার স্মৃতি রক্ষার্থে নতুন ক্যাম্পাসে কবে ভবন হবে আর সে ভবন কবে তার নামে নামকরণ করা হবে এটা বহু দূরের কথা। আমি বাকিতে বিশ্বাস করি না। তাই বর্তমান ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন উপাচার্য স্যারের নামে নামকরন করা হোক। এছাড়াও তিনি যে ডিনস্ অ্যাওয়ার্ডের প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন তাই প্রথম ডিনস্ অ্যাওয়ার্ডটি তার নামে নামকরনের দাবি জানাচ্ছি।
উপাচার্যের স্মরনে আরও স্মৃতি চারণ করেন আর্থ ও সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড মনিরুজ্জামান খন্দকার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান , সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড এস এম মাসুম বিল্লাহ, শিক্ষক সমিতি সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড একেএম লুৎফর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড মোস্তফা কামাল, ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারন সম্পাদক এস এম আক্তার হোসাইন।
আলোচনা সভার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রায়ত উপাচার্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ