পূর্ব বাংলায় যখন ফরায়েজী আন্দোলন শুরু হয়।একই সময়ে পশ্চিম বাংলায় শুরু হয় ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন।ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন তিনি ছিলেন ইতিহাসে বিখ্যাত শহীদ তিতুমীর। আজ তার ১৯২ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তিতুমীর ওয়াহাবী আন্দোলন এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি জমিদার এবং ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন।
তিতুমীর যার আসল নাম ছিল সাইয়িদ মীর নিসার আলী ।তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিতুমীরের জন্ম হয় চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের চাঁদপুর গ্রামে এটি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হিসেবে খ্যাত। তার পিতার নাম মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রোকেয়া খাতুন। তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতেও লেখাপড়া করেছেন।
১৮ বছর বয়সে তিনি কুরআনে হাফেজ ছিলেন, বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিতুমীর একজন দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।
শহীদ তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ১৮৩১ সালের অক্টোবর মাসে নারকেলবাড়িয়ায় এক দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অনুগত অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই কেল্লা তিনি প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেন। কৃষক-প্রজাদের নিয়ে প্রচলিত ও সনাতন অস্ত্রে সজ্জিত এই বাহিনীকে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই বিরাট বাহিনী স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সংগ্রামী চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে তিতুমীরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করে।
ইংরেজ সরকার তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার সন্ধান পেয়ে তিতুমীরকে দমন করতে উদ্যত হন। তদানীন্তন বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক তিতুমীরকে দমন করার জন্য ১৮৩১ সালে ১৭ নভেম্বর লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে বিরাট এক সামরিক বাহিনী প্রেরণ করেন। নদীয়া ও গোবরডাঙার জমিদাররাও তাদের পাইক বরকন্দাজদের একত্র করে ইংরেজ বাহিনীর সাথে মিলিত হয়। অবশেষে উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইংরেজদের আধুনিক মারণাস্ত্র ও গোলার আঘাতে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। কিন্তু আত্মসমর্পণ বা পলায়নের চেয়ে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ শ্রেয়তর মনে করে তিতুমীর ও তার বহু সংখ্যক অনুসারী সম্মুখ সমরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শহীদ হন। দেশের জন্য তিতুমীরের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে তাকে স্থায়ী আসন দিয়েছে।অধিনায়ক গোলাম মাসুমসহ ৩৫০ জন বিপ্লবী সৈনিক ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। গোলাম মাসুম মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
সালাউদ্দিন/সাএ