২০২১ সালে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের ‘রিসোর্ট কাণ্ডে’র সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে থাকা টি. এম. মোশাররফ হোসেনকে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অদক্ষতা ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে জানিয়েছেন আদালত।
তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ওই নারী মামুনুল হকের স্ত্রী নন : সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্ত থাকা খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টি. এম. মোশাররফ হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মকালে মাওলানা মামুনুল হক তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নাকে নিয়ে রয়েল রিসোর্টে উঠায় এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩টায় সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর রুমে ঝর্নাকে নিয়ে উঠেন মামুনুল হক।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, রিসোর্টের কর্মচারীর মাধ্যমে স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা মামুনুল হকের অবস্থান করা ৫০১ নম্বর রুমে প্রবেশ করে ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন টি.এম. মোশাররফ হোসেন। তিনি পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক মামনুল হককে বুঝিয়ে থানায় নিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করেন।
আরও পড়ুন: প্রিজনভ্যান থেকে অনুসারীদের যে উপদেশ দিলেন মামুনুল হক
জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কিন্তু হেফাজত নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় মামুনুল হককে থানায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে হেফাজত নেতাকর্মীরা ভাঙচুর শুরু করলে তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হেফাজত কর্মীদের হাতে বুঝিয়ে দেন। এ ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া সোনারগাঁ থানায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন এবং জান্নাত আরা ঝর্ণাকে হেফাজত কর্মীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যেতে বলেন, যা তাদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
এরপর ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয় বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে নাটক সাজানো হয়েছে: মামুনুল হক
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এর পরিপ্রেক্ষিতে টি.এম. মোশাররফ কারণ দর্শানোর জবাব দিয়ে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন। তার ব্যক্তিগত শুনানিও গ্রহণ করা হয়। কারণ দর্শানোর জবাব, ব্যক্তিগত শুনানি এবং প্রাসঙ্গিক সব তথ্য বিবেচনা করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকায় অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে টি. এম. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত ‘অদক্ষতা’ ও ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে ভবিষ্যতে সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
টিটি/জেডএইচ/এমএস