হঠাৎই লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে তীব্র অস্বস্তিতে ভুগছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সারারাত দিন মিলিয়ে অগণিতবার বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অসহনীয় হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবন। কুষ্টিয়ার তীব্র গরম এবং লোডশেডিং এর এমতাবস্থার ফলে পড়াশোনা করতেই অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের।
দেশে বিদ্যুতের সংকটকালে এমন লোডশেডিং না মেনে নিয়ে উপায়ও নেই শিক্ষার্থীদের তবে তেলের কারণে জেনারেটর ঠিকমতো চালানো না নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইনডোর আউটডোর মিলিয়ে ৫ টি সাবস্টেশন রয়েছে। যার ফলে কুষ্টিয়া থেকে সাপ্লাই করা উচ্চভোল্টেজের বিদ্যুৎ লো ভোল্টেজ করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, এতোদিন পার্শ্ববর্তী এলাকায় লোডশেডিং থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বিদ্যুৎ থাকতো। তবে ইদানিং সময়ে লোডশেডিং এর পরিমাণ বেড়েছে সেই সাথে আগের থেকে জেনারেটর দিয়ে ইমার্জেন্সি বিদ্যুৎ সাপ্লাই ও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিসসূত্রে, মোট ৫ টি জেনারেটর দিয়ে ইমার্জেন্সী বিদ্যুৎ সাপ্লাই করা হয়। তবে লোডশেডিং এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত সময় জেনারেটর চালাতে বেগ পেতে হয়। টানা জেনারেটর চালানোর ফলে তা গরম হয়ে যাচ্ছে ফলে বাধ্য হয়েই সময়ের আগে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখন চাকরীর প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। রাতের বেশীরভাগ সময়টাই আমাদের কাটে হলের রিডিং রুমে। তবে তীব্র লোডশেডিং ও গরমে সেখানে এখন টেকাই মুশকিল যার ফলে আমাদের চাকরীতে টেকাটাও হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা চাই লোডশেডিং সমস্যা যতদিন না ঠিক হচ্ছে ততোদিন যেনো অন্তত হলের রিডিং রুমগুলোতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এর নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ করা হয়।
তেলের সংকট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মুন্সি সহিদ উদ্দীন তারেক বলেন, তেলের ঘাটতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় তা সম্পূর্ণ সরবরাহকারী পাম্পের উপর। তারা আমাদের চাহিদামতো তেল সরবরাহে ব্যর্থ। জেনারেটর চালানোর শিডিউল সম্পর্কে তিনি বলেন, দিনের বেলায় শুধু একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকলে সেই ভবনগুলোতে আমরা জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। রাতের বেলায় হলে ১১ টা পর্যন্ত জেনারেটর চালানোর নিয়ম। তবে এতোদিন লোডশেডিং এর পরিমাণ কম থাকার কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ১২ টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলেও জেনারেটর চালিয়েছি যা এখন আর সম্ভব হচ্ছেনা।
নতুন সাবস্টেশন স্থাপন করা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সাবস্টেশন গুলো শুধু নতুন ভবনে লিফটের নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হবে। যার ফলে পুরোনো হলে এর কোনো সুবিধা পাওয়া যাবেনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ প্রকৌশলী এ.কে.এম শরীফুউদ্দীন বলেন, জেনারেটর গুলো শুধু হলের ইমার্জেন্সি লাইট চালাতে ব্যবহারের নিয়ম, ডাইনিং এবং রিডিং রুমে ফ্যান চলবে তবে শিক্ষার্থীরা লাইনগুলো বাইপাস করে রুমের সকল ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস চালাতে লোডশেডিং এর সময়ে জেনারেটর ব্যবহার করছে। যার ফলে এই সময়ে এসে তারা জেনারেটরের পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রকৌশল অফিসসূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়াস্থ মোজাফফর পাম্প থেকে চুক্তিনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন ও বিদ্যুতের জন্য তেলের সরবরাহ করা হয়। তবে ইদানিং সময়ে তারা পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ করতে না পারায় তেলের অভাবে জেনারেটর বন্ধ রাখার বিষয়টিও সত্যি।
এ বিষয়ে মোজাফফর পাম্প কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়েছে। আমরা অই অনু্যায়ী তেল মজুদ করতে পারছিনা। যার ফলে এই সমস্যাটা হয়েছে৷ আবার এই সমস্যাটা দীর্ঘস্থায়ীও নয় তাই আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই তা কেটে যাবে।
লোডশেডিং এবং জেনারেটরের এমন দূর্দশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, লোডশেডিং এর এই অবস্থায় আমাদের কিছুই করার নেই আপাতত। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের। সেক্ষেত্রে প্রশাসন সচেষ্ট আছে। হয়ত খুব শীঘ্রই সমস্যাটা নিরসন হবে।