শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার পর ব্যাক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি আজ। কবে আদেশ দেবেন সেটিও নির্ধারণ করেননি শ্রম আদালত। বিষয়টি ক্যাম্পাসনিউজকে নিশ্চিত করেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।
বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি থাকার কারণে ড. ইউনূসের ব্যাক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই তার মামলায় ব্যাক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতির জন্যে আবেদন করা হয়েছে। এটার ওপরে এখনো কোনো আদেশ প্রদান করেনি আদালত, বলছেন পরবর্তীতে আদেশ দেওয়া হবে।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হলো। মঙ্গলবার (৬ জুন) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এ আদেশ দেন।
লেবার আইনের ৪ এর (৭) এবং (৮) ধারায় শ্রমিকদেরকে স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে আনলিভ দেওয়া হয়নি আর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি। এ কারণে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী।
তথ্য নিশ্চিত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া মামলায় অপর তিন বিবাদী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনিসহ চারজন বিবাদী নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। আমরা মনে করি হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার ঘটনা দেওয়ানি প্রকৃতির। অথচ ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের হুবহু অনুলিপি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে আদালত এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।
যদিও ড. ইউনুসের আইনজীবীর দাবি আইন অনুযায়ী এসব দাবি সঠিক না। তিনি জানান, চার্জ শুনানির গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি হলো-গ্রাামীণ টেলিকম তার শ্রমিকদেরকে স্থায়ী করে না। আর একটি অভিযোগ করা হয়েছে, যে গ্রামীণ টেলিকম তাদের অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করে না। আর সর্বশেষ ও তৃতীয় অভিযোগটি হলো মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি।
যার বিপরীতে আমরা অব্যাহতির পিটিশ দিয়ে বলেছি, যে গ্রামীণ টেলিকম অলাভজনক কোম্পানি যা কোম্পানির আইনে ২৮ ধারায় নিবন্ধিত হয়েছে। সেখানে সু-স্পষ্টভাবে উল্লেখ আয়ে যে মুনাফা দেওয়া নিষিদ্ধ। কারণ এ মুনাফা দিয়ে আরো বিভিন্ন কম্পানি করে দেশের উন্নয়ন করা হয় এবং গ্রামীন ব্যাংক প্রকল্পের মতোই বেকার সমস্যাকে দূর করা হয়। তার পরে আমরা শ্রমিকদেরকে স্থায়ি করি না। গ্রামীন টেলিকম পল্লীফোন ও নোকিয়া সেটের সাথে চুক্তি করে দেশের উন্নয়ন করেছে। তার মানে আমরা তো চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। আমরা কোন শ্রমিককে স্থায়ী করতে পারি না। আমি নিজেই চুক্তি ভিত্তিক কাজ করি, আমি তো কাউকে স্থায়ী করতে পারি না।
এদিকে গত ৩০ মে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
এফএইচ/এমআইএইচএস