সুনীল অর্থনীতির সুফল কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও বিশ্বে তাক লাগাবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণসহ এ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশও বিপ্লব ঘটাবে। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ যেমন বিশ্বে প্রথম, সুনীল অর্থনীতি ব্যবহারেও কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে থাকবে।
রোববার (১১ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘সুনীল অর্থনীতির সুফল অর্জনে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ শীর্ষক সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের ফলে সুনীল অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা পরিচালনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সমুদ্রের প্রচলিত ও অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, সুনীল অর্থনীতি পরিকল্পনা বাস্তবায় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণে ব্যাপক কাজ করছি। এরই মধ্যে এ সম্পদ আহরণ ও যথাযথ ব্যবহারে ‘সাসটেইবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ব্যাপকহারে গবেষণা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুনীল অর্থনীতির সুফল, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশও বিশ্বে বিপ্লব ঘটাবে।
মন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সরকার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত গবেষণাগার স্থাপন করেছে। মৎস্যবিজ্ঞানী ও গবেষকরা সুনীল অর্থনীতির যথাযথ ব্যবহার এবং সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ তথা ওয়েস্টার, কাঁকড়া, গ্রিন মাসেলস ও সিউইড নিয়ে গবেষণায় সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। এছাড়া সরকার বিলপ্ত ৩২ প্রকার মাছ সফলতার সঙ্গে উৎপাদন করেছে। এসব দেশীয় মাছ চাহিদা অনুয়ায়ী ব্যাপক উৎপাদিত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, উল্লেখিত প্রকল্পে কক্সবাজার-চকোরিয়াভিত্তিক স্মার্ট চিংড়ি সিটি স্থাপনের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে ড. নাহিদা রশীদ বলেন, মৎস্যসম্পদ আহরণ এবং এ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।
এসময় প্রকল্প বাস্তায়ন ও প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করেন ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের’ উপ-প্রকল্প পরিচালক মনিষ মন্ডল। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ২২টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করা হয়েছে। উপকূলীয় ৪৫টি উপজেলায় চিহ্নিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হতে ক্যাচ অ্যান্ড ইফোর্ট উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আর্টিস্যানাল মৎস্য নৌযানে ৮ হাজার ২৫০টি জিএসএম ডিভাইস সংযোজন করা হয়েছে। ১ হাজার ৫০০টি এআইএস সংযোজন চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
এছাড়া এমসিএস নিশ্চিতকরণে মৎস্যজীবি ডাটাবেজ হালনাগাদ করে ১৫ লাখ মৎস্যজীবিকে আইডি কার্ড এবং ১০ হাজার স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ‘মেরিন ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩০০টি চিংড়ি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭ হাজার ৮২৬ জন খামারিকে ৯৯.৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। ৫২ হাজার ৪৯৩টি মৎস্যজীবী পরিবার সমন্বয়ে ৪৫টি মৎস্যজীবী গ্রাম সংগঠিত করা হয়েছে। গ্রামপ্রতি ৩৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি মৎস্য অবতরণকেন্দ্র পুনর্বাসন ও ১টি বাগদা চিংড়ির ব্রুড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার নির্মাণ করা হবে। কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলায় সরকারি চিংড়ি এস্টেটে সর্বোচ্চ সহনশীল ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ৩৫১.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চকোরিয়াভিত্তিক স্মার্ট চিংড়ি সিটি স্থাপনের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বৈঠকে মূল আলোচনা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম। পরিকল্পনা ও জরিপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও জরিপ) সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর।
বৈঠকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। এসময় যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, বিটিভির সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে বিভিন্ন পত্রিকা টেলিভিশনের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা সুনীল অর্থনীতির যথাযথ ব্যবহার, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং গবেষণা বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ইএ/জিকেএস