পুলিশের কাজে বাধা, নাশকতার অভিযোগে ও বিস্ফোরকদ্রব্য রাখার এক মামলায় হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর পল্টন থানায় দায়ের করা অপর দুটি মামলায় কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (১২ জুন) হাইকোর্টের পৃথক দুটি ডিভিশন বেঞ্চ থেকে তার জামিনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে একটি মামলায় জামিন ও অপরটি দুটিতে রুল জারি করেন আদালত।
মামনুল হকের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আজকে একটি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এদিকে পল্টন থানায় দায়ের করা দুই মামলায় কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক মামলায় জামিন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
মামুনুল হকের আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বিষয়টি ক্যাম্পাসনিউজকে নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে একটি আন্দোলন হয়। এ আন্দোলনে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি বিক্ষোভ করেছেন। পল্টনে দোকান ভাঙচুর করেছেন। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা করেছেন তিনি কোনো দোকানের মালিক নন। তিনি পিটিশনে উল্লেখ করেছেন তিনি একজন সচেতন নাগরিক। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে এক সচেতন নাগরিকের পক্ষে মামলা হতে পারে না। পরে শুনানি শেষে আদালত পল্টনের দুটি মামলায় তাকে রুল দিয়েছেন।
এর আগে গত ৭ মে পল্টন ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের করা পাঁচ মামলার দুই মামলায় হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মামুনুল হককে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার জজ আদালত। বাকি তিন মামলার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি।
গত ৭ মে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি করে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে এ দুই মামলায় নতুন করে মামুনুল হককে জামিন নিতে হচ্ছে না।
এর আগে গত ৩ মে রাজধানীর পল্টন ও চট্টগ্রামের হাটহাজারি থানায় করা পাঁচ মামলায় মামুনুল হককে জামিন দেন আদালত। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে ৪১টি মামলার মধ্যে ২৩ মামলায় জামিন পান তিনি। কারামুক্ত হতে বাকি মামলাগুলোতেও তাকে জামিন পেতে হবে।
২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও বিভাগীয় পুলিশ ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার একটি যৌথ দল।
২০২০ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি মামলাগুলো জামিন না হওয়ার তিনি আপাতত কারামুক্ত হতে পারছেন না।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মোট ৪১টি মামলা হয়। ৪১ মামলার মধ্যে মতিঝিল থানায় চারটি, পল্টন থানায় ৯টি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় তিনটি, সিদ্ধিরগঞ্জে তিনটি, হাটহাজারী মডেল থানায় আটটি, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় একটি, কুমিল্লার চান্দিনা থানায় একটি, রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি, মোহাম্মদপুর থানায় একটি, দারুস সালাম থানায় পাঁচটি ও মিরপুর মডেল থানায় তিনটি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও দুটি মামলা রয়েছে।
এফএইচ/ইএ/এমএস