ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শুক্রবার দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা নীলকমল পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে আমার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারব না।’
বৃহস্পতিবার দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক নোটিশে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের সহকারী পরিচালক নীলকমল পালকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী শাহবুব আলমের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৭ জুলাই সকাল ১০টায় তাঁকে কুষ্টিয়া কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচনী বোর্ড বসে। প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে বোর্ডে থাকা অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হোসেনের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ তুলে দুদকে লিখিত আবেদন করেন নিয়োগ প্রার্থী শাহবুব আলম।
অভিযোগকারী শাহবুব আলম বলেন, ‘ভিসি স্যার অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ফাঁস হওয়া অডিওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। সর্বাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আমাকে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ও উপাত্তসহ আমি দুদকে অভিযোগ করেছি। এর প্রেক্ষিতেই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ডাকা হয়েছে।’
তবে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব অবস্থান করায় এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিয়োগ নিয়ে এ পর্যন্ত উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ ১৮টি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে।
১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগসংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। এর একটিতে টাকার চেক ও মনোনীত প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে কি না, এ সংক্রান্ত আলাপন শোনা যায়। অন্যটিতে ওই বিভাগের দুই প্রার্থীর কাছে বোর্ডের আগে চেক জামানত রাখা ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত দেখিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়ে উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ কথোপকথন শোনা যায়।
এরপর আরও কয়েকটি অডিও ফাঁস হওয়ায় এপ্রিল ও মে মাসে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত রেখেছিলেন উপাচার্য। জুন মাসে আবারও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
পরে আবারও কয়েকটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এসবের মধ্যেই নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন উপাচার্য।
২০ জুন পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব রওনা হয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।