বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্বরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর। সমাবেশকে সফল করতে এরই মধ্যে ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় সংগঠন থেকে দেয়া হয়েছে ৭টি নির্দেশনা। এসব নির্দেশনার মধ্যে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিট থেকে সমাবেশকে সফল করতে নিজ ইউনিটে ও তার অধীনস্ত ইউনিটগুলোতে নির্বাহী সভা, বর্ধিত সভা, কর্মী সভার আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টার লাগানো ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। করা হয়নি কোন ধরনের প্রস্তুতি বা বর্ধিত সভাও। যার ফলে সমাবেশে যোগ দিতে অনীহা দেখা গেছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমাবেশকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি হল বা শাখা ছাত্রলীগের নির্বাহী পরিষদের কোনো ধরনের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেনি রাবি ছাত্রলীগ। শুধু মাত্র লিখিত নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের পূর্বপ্রস্তুতি। ফলে কেন্দ্রীয় সমাবেশে যোগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কর্মী থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতাকর্মী। সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না পেয়ে এরই মধ্যে নিজেদের উদ্যোগে সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বেশ কয়েকজন পোস্টেট নেতা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বড় একটি ইউনিট হলেও দুই শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়েও উপস্থিত হতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছেন শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবি ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, এক কমিটি দিয়েই চলছে প্রায় ৭ বছর। বর্তমান কমিটির কাছ থেকে প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আয়োজিত স্বরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশে যোগ দিতে প্রত্যেকটি ইউনিটে নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভার আয়োজন করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে ক্যাম্পাসে কোনো বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়নি। আমরা আশায় ছিলাম আমাদেরকে নিয়ে বর্ধিত সভা করা হবে কিন্তু করা হয়নি। সিট বাণিজ্য ও ভর্তি জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে পড়ে আছেন তারা। হলে ছাত্রলীগের ব্লক থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মীরা হলে উঠতে পারছে না। ফলে সমাবেশে যোগ দিতে অনাগ্রহ কাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। অনেকেই আবার নিজ উদ্যোগে সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, আমাদেরকে নিয়ে শাখা ছাত্রলীগ বা হল ছাত্রলীগ কোনো বর্ধিত সভা করেনি। আগে ভেবেছিলাম যাবো কিন্তু এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ফলে এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সমাবেশো যাবো কিনা?
সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, স্মরনকালের সর্ববৃহৎ ছাত্রসমাবেশকে সফল করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি হলে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি দুই থেকে তিন শতাধিক নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা সমাবেশে অংশ গ্রহণ করতে পারবো। ট্রেন যোগে সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা সবাই ট্রেনের টিকিট কেটেছি। আমাদের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার দাবি ২ হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। অনেক নেতাকর্মী আগে থেকেই ক্যাম্পাস থেকে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
সমাবেশকে সফল করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্বরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশকে সফল করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এর গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং কর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে রাবি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে তাদের অধীনস্ত কর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন কর্মীদের সাথে সভা করেছে কিনা সে বিষয়ে আজকে আবারও খোঁজ নিবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘সর্বকালের সর্ববৃহৎ’ ছাত্রসমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রসমাবেশ সফল করতে প্রতিটি সাংগাঠনিক ইউনিট ও ছাত্রসমাজকে সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
সালাউদ্দিন/সাএ