আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান। সারাদেশে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের স্থান ১৮তম। আর চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালটি। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলেছে নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা। সরকারি কাগজে কলমে এই হাসপাতাল ১০০ শয্যা হলেও চিকিৎসা সেবা চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে। হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৮১ জন। জনবল না বাড়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
এর মধ্যে আবার অনেক চিকিৎসকের পদ শূন্য। নেই আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও। সংকট রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর। তারপরও সেবা প্রদানে চেষ্টার কোন কমতি নেই চিকিৎসকদের। হাসিমুখেই রাত-দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া হাসপাতালটির বহির্বিভাগের দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই পুরো বারান্দায় জুড়ে রোগীর শয্যা। শুধু এই বারান্দাই এই চিত্র নয়, হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে, বারান্দায়, বাথরুমের পাশে মেঝেতেও মাদুর বিছিয়ে শয্যা বানিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দীঘিনালা উপজেলা থেকে বৃদ্ধ বাবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন শাহিন আলম। তিনদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শাহিন বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক রোগী। রোগীর কারণে এখানে হাটতেও অসুবিধা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগের ভাল চিকিৎসক ও উন্নতমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। তাই বাড়তি চিকিৎসাসেবা নিতে এখানে আসা তার।’
মাটিরাঙ্গা থেকে আসা দিগন্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘তার সন্তানের হাপানি হয়েছে তাই হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালে সিট খালি নেই। তাই কষ্ট হলেও বারান্দায়সহ শয্যা বানিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।’
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৫টি বিভাগের অধীনে ৬টি ওয়ার্ডে ২১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে ৮টি পদই শূন্য। হাসপাতালের অন্য জনবলেও সংকট রয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদেরও। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান ধরে রাখতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত ভবন সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। চিকিৎসকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদারের যোগসাজশে খামখেয়ালি ভাবেই চলছে কাজ। এর দেখভাল করার যেন কেউ নেই। কোন কাজ কিভাবে হচ্ছে বা নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণ কি এসব ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানাতে নারাজ গণপূর্ত। গণপূর্তকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও এর কোন সদুত্তর পাননি বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন। সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জনবলের পাশাপাশি সম্প্রসারিত ভবনও দরকার। তাই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবী জানান চিকিৎসকরা।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রিপেল বাপ্পী চাকমা বলেন, ‘এই হাসপাতালে প্রায়ই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীর চাপের কারণে চিকিৎসকদের কষ্ট তো হয়ই। তারপরও আমরা কখনো কোনো রোগীকে অবহেলা করি না। কোনো রোগী আসলে ভর্তির প্রয়োজন হলে তাকে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছি। এ ছাড়া খাগড়াছড়িসহ পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন ৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। তিনি বলেন, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতা যদি আরও বাড়ানো যায়, তাহলে এখানে রোগীর চাপ কমতো।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মো. সাবের বলেন, ‘আমাদের ৫০ শয্যার চিকিৎসক দিয়ে ১০০ শয্যার রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট থাকার পরও যে চিকিৎসকরা আছেন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবল সংকটের পাশাপাশি আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। আমাদের আরও সম্প্রসারিত ভবন দরকার। আমাদের এখানে ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকবছর ধরেই এটির কাজ চলছেইতো চলছে। কবে শেষ হবে এর কোন ঠিকঠিকানা নেই। দ্রুত কাজ শেষ হওয়া দরকার। সেটা চালু হলে সেবার মান আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।’
সালাউদ্দিন/সাএ