Bangal Press
ঢাকাTuesday , 12 September 2023
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরির খবর
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. বিনোদন
  11. ভ্রমণ
  12. মতামত
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা জগৎ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা কক্সবাজারের কটেজ জোন

ডেস্ক রিপোর্ট
September 12, 2023 5:19 am
Link Copied!

পর্যটন শহর কক্সবাজারের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন স্পট সাগর তীরবর্তী হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী। ইট-পাথরের এই শহরে পরিবেশ ও নান্দনিকতায় পর্যটকদের মনে জায়গা করে নিলেও এই স্পট ঘিরে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধচক্র। সন্ত্রাসীদের আস্তানা, বখাটেপনা, মাদক বাণিজ্য, দেহ ব্যবসাসহ নানামুখী অপরাধ এখন ওপেন সিক্রেট। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা লোকজন নিজেদের অনিরাপদবোধ করছেন। কলাতলী কটেজ জোনে গভীর রাত পর্যন্ত বেপরোয়া মোটরসাইকেল রেসিংয়ে মগ্ন থাকে অপরাধ জড়তে পা বাড়ানো কিশোর ও তরুণ গ্যাং। চলে কার রেসিংও।
এতে প্রভাবিত হয় আশপাশের তরুণ-যুবকরা। এখানে গাড়ি ও দৃষ্টিনন্দন হোটেল-কটেজে বসে চলে মাদকের বেচাকেনা। ঘুরতে আসা তরুণীদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। এ কারণে কলাতলীর আশপাশের বাসিন্দারাও অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। বাসিন্দারা সব সময় থাকেন আতঙ্কে ও উদ্বেগে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীতে গড়ে ওঠা কটেজ জোনটি একটি ‘মিনি যৌনপল্লী’ হিসেবে পরিচিত। যেখানে মাদক, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। কটেজের মালিক, ম্যানেজার, বয়সহ সংঘবদ্ধ চক্র এসব অপরাধে জড়িত।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই কলাতলীর বিভিন্ন কটেজে বসে মাদকসেবীদের আসর। আর অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে। চলে ছিনতাই, অসামাজিক কার্যকলাপ। ওই এলাকা মাঝে মাঝে অভিযান চললেও অপরাধীরা বেপরোয়া।
কলাতলীর এলাকার বাসিন্দা শামীম বলেন, কটেজ জোনে দিন দিনই উপভোগের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পরিণত হয়েছে ছিনতাইকারী, মাদকসেবী আর ভাসমান দেহজীবীদের অভয়ারণ্যে। রাত যত বাড়তে থাকে ততই যেন নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পরিবেশ। ল্যাম্পপোস্টের আলো লেক ঢালের যেসব স্থানে পৌঁছে না, সেসব স্থানেই মাদকসেবীরা অবস্থান করে। এছাড়াও গলির ভেতরে আশপাশের কটেজেই মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের তৎপরতা বেশি বলে জানান তিনি।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীতে সৈকত আবাসিক এলাকায় ৮০টি ছোট ছোট আবাসিক হোটেল নিয়ে গড়ে উঠেছে কটেজ জোন, যা দিনদিন যেন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।
এই কটেজ জোন ঘিরে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত নেতিবাচক সংবাদ দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে দুই কিশোরীকে অপহরণ করে এই জোনের রাজন কটেজে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছে ঘটনার শিকার এক কিশোরী।
এই এলাকাকেন্দ্রিক ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ এক অভিযানে ৪ কিশোরকে উদ্ধার করে গ্রেপ্তার করেছিল ১১ জনকে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ তখন জানিয়েছিল, একটি কটেজকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধ করছে সংঘবদ্ধ চক্র। চলতি বছরের ২১ মে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে নারীসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব জানিয়েছিল, ওই কটেজটিও অপরাধীদের টর্চার সেল। শুধু তা-ই নয়, এই কটেজ জোন থেকে গত দুই বছরে ২২ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে।
হোটেল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন বিকেলে হওয়ার সাথে সাথে বখাটে ছেলেমেয়ে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন কেটেজে। একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে নানামুখী উচ্ছৃঙ্খলতা আর খোলামেলা মাদক সেবনে রীতিমতো হৈ-হুল্লোড় সৃষ্টি করে তারা। বিশেষ করে কটেজ জোন ও লাইট হাউস এলাকায় অবিস্থত বিভিন্ন ফ্লাট বাসায় বখাটে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতি রাতেই অর্ধনগ্ন তরুণ-তরুণীদের বেলেল্লাপনা চলে এখানে। সৈকত পাড়ার রাস্তা ধরে ডিসি পাহাড়ঘেঁষা ঢালে তরুণ-তরুণীর বিব্রতকর আড্ডাবাজি চলে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও কিছু কিছু আবাসিক হোটেল-কটেজে প্রকাশ্যেই মাদক কেনাবেচা চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এই কটেজ জোনটি স্বঘোষিত কটেজ জোন নেতা হানিফ, নুরুল হুদা, রফিক, আবুলসহ কয়েকজনের নিয়ন্ত্রণে। যেখানে ৮০টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে চক্রটি। জেলা ও ট্যুরিস্ট পুলিশকে ম্যানজের কথা বলে আদায় করা হয় এই চাঁদা। 
কটেজ জোনকে পতিতাবৃত্তি ও অপরাধের আখড়া বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার। 
তিনি জানান, ওই জোনটিতে যৌনকর্মী-খদ্দেরের উপদ্রব আশঙ্কাজনক। বিভিন্ন সময় সেখানে নানা অপরাধের কারণে পর্যটন শিল্প নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা উচিত।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সময় কটেজ জোনকেন্দ্রিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। যেখান থেকে বিভিন্ন সময় যৌনকর্মী, খদ্দের আটকের মামলা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মাদকও। এখন নতুন করে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সোমবার রাতে রাজন কটেজে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে এক ভিকটিম উল্লেখ করেছে, গত রবিবার সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছিল ৩ কিশোরীসহ ৫ জন। কক্সবাজার পৌঁছার পর উঠেছিল কলাতলীর মেরিন প্লাজা নামের একটি আবাসিক হোটেলে। সোমবার রাত ১১টায় দুই বান্ধবী মেরিন প্লাজা থেকে বের হয়ে হেঁটে গিয়ে সুগন্ধা সড়কের পাশে কাঁকড়া ভাজা খায়। সেখান থেকে হোটেল ফেরার সময় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে পাঁচ যুবক এসে দুইজনকে হাত-মুখ চেপে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীতে কটেজ জোনের রাজন কটেজে। সেখানে দুই কিশোরীকে পৃথক কক্ষে আটকে রাখা হয়। 
অপর কক্ষের পরিস্থিতি সে জানলেও তার ওপরে চালানো হয় ভয়াবহ নির্যাতন। তারপর রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকালে জ্ঞান ফেরার পর দুইজনকে আবারও হুমকি দিয়ে ইজিবাইকযোগে নিয়ে যাওয়া হয় বাস টার্মিনাল এলাকায়। ওখানে মারসা নামের একটি বাসে তাদের দুইজনকে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দুইজনের একজন রক্তরক্ষণসহ অসুস্থবোধের কারণে বাস থেকে নেমে গিয়েছিল রামু বাইপাস এলাকায়। যেখান থেকে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই কিশোরীর চিকিৎসা প্রদান করেছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক নুরুল হুদা শাওন। 
ডাক্তার নুরুল হুদা শাওন জানান, যে কিশোরী মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসার জন্য আসে তার মাথা ফাটা এবং রক্তাক্ত ছিল। বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশি সহযোগিতা চেয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে রামু থানার পুলিশকে তিনি অবহিত করেন এবং কিশোরীকে পুলিশ হেফাজতে হস্তান্তর করেন।
মঙ্গলবার এ ঘটনার পরপরই কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল রাজন কটেজে গিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন রাজন কটেজের সহকারী ব্যবস্থাপক নুরুল আজিম।
তিনি জানান, সোমবার রাতে কটেজের দায়িত্বে ছিলেন আরেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোহেল। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তিনি হোটেলে দায়িত্ব পালন করতে আসেন। এ সময় তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। পরে বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের একটি দল কটেজে এসে সোহেলকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ কটেজ থেকে অতিথি নিবন্ধন খাতা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ঘটনাস্থল হিসেবে ওই কক্ষ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে দুইজনকে অজ্ঞাত আসামি করে এজাহার দায়ের করলে মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়। মামলাটি ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এজাহারের ১ নম্বর আসামি সোলেমান শামীমকে (২৩)। শামীম কক্সবাজার শহরের মোহাজেরপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে। এজাহারে উল্লেখ থাকা অপর দুইজন হলেন হারবদল ও রশিদ ড্রাইভার।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ শেহেরিন আলম বলেন, কক্সবাজার সদর থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের এক কর্মকর্তাকে।
ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ সোলেমান শামীম নামের এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে এই সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা দুই আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।



সালাউদ্দিন/সাএ

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।