Bangal Press
ঢাকাMonday , 5 June 2023
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরির খবর
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. বিনোদন
  11. ভ্রমণ
  12. মতামত
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা জগৎ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সালাউদ্দিনের পেনাল্টি ঠেকিয়েই বিখ্যাত হয়েছিলেন গোলরক্ষক মহসিন

Link Copied!

সকালে প্রিয় ছোটভাই মোজাম্মেল হক চঞ্চলের দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনটা পড়েই মনটা বিষাদে ভরে উঠলো। মনটা খুব খুব খারাপ হয়ে গেল। এতটা খারাপ অনেকদিন লাগেনি। আমার স্বপ্নের গোলরক্ষক মোহাম্মদ মহসিন অনেক অসুস্থ। শরীর যারপরনাই খারাপ।

পরে বন্ধুবর আজম ভাইয়ের (নামী সাংবাদিক শহিদুল আজম) ফেসবুক পোস্ট পড়লাম। এরপর আমাদের জাগোনিউজের সহকর্মী অনুজপ্রতিম রফিকের রিপোর্টটি পড়ে ধারনা আরও পরিষ্কার পেলাম।

গোলরক্ষক মোহাম্মদ মহসিনের ছোট ভাইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রফিক লিখেছে, ‘মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন এক সময়ে জাতীয় দলের গোলকিপার মহসিন।’

শহিদুল আজম ভাইয়ের লেখার কোলাজে চারখানা ছবি দেয়া। প্রথমটি ফর্মের চুড়োয় থাকা মহসিন ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এরপর তার বর্তমান তিনখানা ছবি। যা দেখে মেলানো কঠিন। অতিবড় মহসিনভক্তও মেলাতে পারবেন না, এই মহসনিই আগের সেই জনপ্রিয় মহসিন।

কিভাবে সম্ভব? শরীরের এমন হতশ্রী অবস্থা কেন? চেহারা পুরোপুরি ভেঙ্গে-চুরে গেছে। ওজন মনে হয় অর্ধেক হয়ে গেছে। মনের ভেতরটা ডুকরে কেঁদে উঠলো। স্মৃতির আয়নায় উঁকি দিল কত স্মৃতি।

সযত্নে লালন করা সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বেরিয়ে এলো ঢাকা তথা বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মোহাম্মদ মহসিনের উত্থানের গল্প। চোখের সামনে ভেসে উঠলো গোলরক্ষক মহসিনের নায়ক হয়ে ওঠার দৃশ্য।

সেটা ১৯৮২ সালের ঘটনা। দেশের ফুটবল অনুরাগিদের কাছে যে বছরটি স্ট্রাইকার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ক্যারিয়ার সেরা হওয়ার বছর। ২৭ গোলের রেকর্ড গড়ার বছর।

কিন্তু ইতিহাস জানাচ্ছে, সেটা ঢাকা মোহামেডানের ইতিহাসের সবচেয়ে সাফল্যর বছরও। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, দাবা, টেবিল টেনিসসহ ওই বছর সব খেলায় ঢাকা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহামেডান। রেকর্ড সংখ্যক ট্রফি উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির ঘরে। দেশ ছাপিয়ে ভারতের দুর্গাপুরের আশিষ জব্বার টুর্নামেন্টও জিতেছিল সাদা কালোরা।

আর সেটাই ছিল গোলকিপার মহসিন ভাইয়ের আবির্ভাবের বছর। তার আগে সেভাবে ঢাকা লিগে নিয়মিত খেলা হয়ে ওঠেনি। মোহামেডানের গোলরক্ষক তখন ‘লাল মোহাম্মদ।’

পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব থেকে এসেছিলেন লাল মোহাম্মদ। প্রায় ছয় ফুট লম্বা, সুগঠিত শরীর। চওড়া কাঁধ। বিশাল বুকের ছাতি। গোলকিপারের জন্য আদর্শ ফিগার। খেলতেনও দারুন। বাতাসে কিংবা মাটিতে লাল মোহাম্মদকে পরাস্ত করা বেশ কঠিনই ছিল।

গোলপোস্টে মোহামেডানের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা লাল মোহাম্মদকে ‘বিট’ করে একাদশে ঢোকা অন্যকারো জন্য ছিল কঠিন ব্যাপার; কিন্তু ভাগ্য সুযোগ করে দিল মহসিন ভাইকে। সেবার লিগে প্রায় সব ম্যাচ জেতা এবং প্রতিপক্ষ দলকে গোল বন্যায় ভাসানো মোহামেডান প্রথম লেগে ভিক্টোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হার মানে।

যতদুর মনে পড়ে শব-ই বারত না হয় ঈদ-ই মিলাদুন্নবীর রাতের পরদিন বিকেলে হওয়া সেই ম্যাচে মোহামেডান ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়তেই গোলরক্ষক পজিসনে পরিবর্তন আনা হয়। লাল মোহাম্মকে পাল্টে মহসনি ভাইকে নামানো হয় মাঠে।

সেই প্রথম মোহামেডানের গোলপোস্ট আগলানোর দায়িত্ব পেলেন মহসিন। রাইট ব্যাক আবুল, লেফট ব্যাক স্বপন দাস। স্টপার আবু ইউসুফ, আরেকজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার কে ছিলেন- ঠিক মনে পড়ছে না। ৪-২-৪ ফরমেশনে মোহামেডানের মাঝমাঠে তখন মোস্তফা কামাল আর রামা লুসাই খেলতেন।

ওপরে কোহিনুর, রাইটআউট, লেফট উইং গাফফার, দুই স্ট্রাইকার বাদল দা (রায়) আর সালাম (মুর্শেদী) ভাই। লিগের শেষ দিকে খুলনা থেকে আগমন জোসির। এই ছিল ৮২’র মোহামেডান।

গোলপোস্টে লাল মোহাম্মদ-এর জায়গায় ভিক্টোরিয়ার কাছে হারা ম্যাচে নামা মহসিন ভাই ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান মজবুত করলেন। ৮২ সালের প্রথম লেগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে মহসিন ভাই এমন এক কীর্তি স্থাপন করলেন, যা তাকে নিয়ে গেল পাদ প্রদীপের আলোয়। করে তুললো বিখ্যাত।

চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে প্রথম লেগের শীর্ষস্থান নির্ধারনী খেলায় ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় পেনাল্টি পায় আবাহনী। পেনাল্টি কিকটি নেন দেশের ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তী ও সে সময়ের এক নম্বর স্ট্রাইকার এবং দেশের ফুটবলের সবচেয়ে স্টাইলিশ ও সফল স্ট্রাইকার কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে সালাউদ্দিনের নীচু হয়ে আসা সে পেনাল্টি শট আটকে দিলেন মহসিন ।

আর ওই পেনাল্টি প্রতিহত করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন মতিঝিল কলোনীর সন্তান মহসিন। পত্র-পত্রিকায় তার বীরত্বগাথা লিখা হয় খুব করে। দেশের ফুটবলের সুপারস্টার সালাউদ্দিনের সেই পেনাল্টি আটকে রীতিমত নায়ক বনে যান মহসিন। মোহামেডান সে খেলায় জিতে প্রথম লেগ শেষ করে শীর্ষে থেকে। সুপার লিগে সালাম-বাদল রায় ম্যাজিকে সব খেলায় গোল বন্যায় ভাসিয়ে সাদা কালোরা হয় চ্যাম্পিয়ন।

গোলপোস্টে নির্ভরতা, বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়ে মহসিন হয়ে ওঠেন তারকা। ৮২ থেকে অন্তত ৫-৬ বছর মহসিন ছিলেন দেশের এক নম্বর গোলরক্ষক। ১৯৮৫ সালের সাফ গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ দলের এক নম্বর গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মহসিন।

গোলকিপার হিসেবে উচ্চতায় একটু খাট; সর্বোচ্চ ৫ ফুট ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি। এই উচ্চতা নিয়েও ঢাকাই ক্লাব ফুটবল ছাপিয়ে জাতীয় দলের হয়ে এশিয়ান ফুটবলেও সমান দক্ষতার ছাপ রেখে অল্পদিনেই অনেক সুনাম অর্জন করেন মহসিন।

তাকে নিচু গ্রাউন্ডারে পরাস্ত করা ছিল রীতিমত দুঃসাধ্য। উচ্চতায় একটু কমতি থাকলেও অসামান্য ক্ষিপ্রতা, চপলতা আর রিফ্লেক্স ও স্পট জাম্প দিয়ে সবটুকু পুষিয়ে নিতেন মহসিন। দুরপাল্লা, ক্লোজ রেঞ্জের জোরালো শটে তাকে পরাস্ত করা ছিল খুব কঠিন। ডান ও বাঁ-দিক থেকে উঁচু, ক্রস, সেন্টার এর বিপক্ষে ঠিক কখন পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডের মাথার ওপর থেকে বাজঁপাখির মত ছোঁ মেরে বল নিজের গ্রিপে নিতে হবে, তা খুব ভালো বুঝতেন মহসিন ভাই।

যদিও ১৯৮৫‘র সাফ গেমসে তার অ্যান্টিসিপেশন আর গ্রিপে খানিক দুর্বলতা ও ঘাটতির কারণে শিশির ঘোষ গোল করে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরও সে ফাইনালে মহসিন ভাই বাকি সময়টা আস্থা ও অসামান্য দক্ষতায় বাংলাদেশের গোলপোস্ট আগলে রেখেছিলেন। শেখ মোহাম্মদ আসলাম ভাইয়ের ৪৫ গজ দুর থেকে নেয়া কামানের মত শটে বাংলাদেশ সমতা ফিরে পায়। পরে টাইব্রেকারে হার মানে লাল সবুজরা। তারপরও আরও কয়েক বছর বেশ সুনামের সাথেই খেলেন মহসিন। মোহামেডান ছেড়ে পাড়ি জমান আবাহনীতে। আকাশী হলুদ জার্সি গায়েও পোস্টের নিচে মহসিন ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী।

দেশের বেশিরভাগ ফুটবল বিশেষজ্ঞ শহিদুর রহমান চৌধুরী সান্টুর পর মহসিনকেই দেশের ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা গোলকিপার বলে মনে করেন। এ অসামান্য প্রতিভাবান গোলরক্ষক পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদুর কানাডায়। ভালই চলছিল দিনকাল। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ আর এর পরপরই কেমন যেন হয়ে যায় জীবন।

এখন সেই প্রাণোচ্ছ্বল মানুষটা কেমন যেন হয়ে গেছেন। দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন। মহান সৃষ্টিকর্তা গোলকিপার মহসিনকে সুস্থ্য করে দিন।

এআরবি/আইএইচএস

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।