Bangal Press
ঢাকাSunday , 11 June 2023
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরির খবর
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. বিনোদন
  11. ভ্রমণ
  12. মতামত
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা জগৎ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আল্লাহর অনন্য নিয়ামত ও বিস্ময়কর নিদর্শন

Link Copied!

ফখরুল ইসলাম নোমানী

পবিত্র জমজম আল্লাহর অপার কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন। জান্নাতি ঝরনা ধারাসমূহের একটি। হজরত ইবরাহিমের (আ.) দোয়ার ফসল। মক্কায় এসে সব হজযাত্রীই পবিত্র মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) নামাজ আদায় করেন। মসজিদুল হারামের ভেতরে-বাইরে অসংখ্য জারে জমজম কূপের পানি রাখা আছে। পাশেই আছে ওয়ান টাইম গ্লাস। যত খুশি পান করা যায় এ পানি। হজযাত্রীরা নামাজ আদায় করতে এসে জমজমের পানি পান করেন। সঙ্গে আনা বোতলে জমজমের পানি ভরে নিয়ে যান। মারওয়া গেটের কাছে কনটেইনার, বড় গ্যালন বা জারে পানি ভরে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে এ পানি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাবাঘরের কাছে হাজরে আসওয়াদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে জমজম কূপ।

বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান জমজমের পানিকে তাবাররুক মনে করেন। প্রতি বছর লাখ লাখ হজযাত্রী হজ বা ওমরা শেষে এ পানি নিয়ে দেশে ফেরেন। সৌদি আরবের ভৌগলিক জরিপের আওতায় জমজম স্ট্যাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার আছে। তারা এ কূপের মান, গভীরতা, অম্লতার মাত্রা বা তাপমাত্রার দিকে নিয়মিত নজর রাখেন। জানা যায়, জমজম কূপ প্রথমে খোলা অবস্থায় ছিল। তখন বালতি দিয়ে পানি তোলা হতো। জমজমের মুখ থেকে ৪০ হাত গভীর পর্যন্ত কূপের চারপাশ প্লাস্টার করা। এর নিচে পাথরকাটা অংশ আছে আরও ২৯ হাত। এসব লাল পাথরের ফাঁক দিয়েই তিনটি প্রবাহ থেকে আসে পানি। একটি কাবার দিক থেকে, একটি সাফা পাহাড়ের দিক থেকে এবং আরেকটি মারওয়া পাহাড়ের দিক থেকে। কাবা শরিফের আশেপাশেও ট্যাপ ও ছোট ড্রামে জমজমের ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করা আছে। মদিনায় মসজিদে নববিতে প্রতিদিন গাড়ির মাধ্যমে এ পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। যুগে যুগে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা শুধু জমজমের পানি পান করেই দিনের পর দিন কাটিয়েছেন। কারণ এতে আছে খাদ্যশক্তি। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধমাস কিংবা তারও বেশি সময় শুধু জমজমের পানি পান করেই কাটিয়েছেন। কখনো ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যদের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু জমজমের পানি পান করেই চল্লিশ দিন কাটিয়েছেন। সুবহান আল্লাহ!’

আরও পড়ুন: মক্কা-মদিনার দোয়া কবুলের বিশেষ স্থানসমূহ 

জমজম কূপের ইতিহাস বরকতময় এ কূপ গড়ে ওঠার পেছনে আছে আশ্চর্য এক ইতিহাস। তখন ছিল হজরত ইবরাহিমের (আ.) নবুয়তকাল। পবিত্র কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে জমজম কূপের অবস্থান। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্ত্রী হাজেরা (আ.) এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে (আ.) মক্কার ফারান পাহাড়ের পাদদেশে এক জনমানবহীন স্থানে নির্বাসন দেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রিয়তমা স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে বিরান মরুভূমির পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সামান্য আহারসামগ্রী সঙ্গে দিয়ে ফেরত চলে আসেন। ওই সময়কালে আল্লাহতায়ালা ব্যতীত বিবি হাজেরা (আ.) এবং হজরত ইসমাইলের (আ.) আশেপাশে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) রেখে যাওয়া সামান্য আহারসামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোনো একসময় হজরত ইসমাইল (আ.) পানির পিপাসায় কান্নাকাটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা শিশুপুত্রের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানির খোঁজে চারদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা (আ.) পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সাতবার ছোটাছুটি করেছেন। কোথাও কোনো পানির সন্ধান পাননি। অবশেষে পানির খোঁজে ব্যর্থ হয়ে শিশুপুত্রের কাছে ফিরে আসেন। হঠাৎ করে বিবি হাজেরা দেখতে পান শিশুপুত্রের পায়ের গোড়ালির ঘষায় আল্লাহর হুকুমে নিচ থেকে পানি উঠছে এবং একটি ঝরনার সৃষ্টি হচ্ছে। ঝরনাটি পরবর্তীকালে জমজম কূপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

জমজম কূপের পানির পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্য পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সব পানির চেয়ে উত্তম। কাবাঘরের ফজিলতের সঙ্গে জমজম কূপের মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মসজিদুল হারামে ইফতারে লাখো রোজাদারের তৃষ্ণা মেটায় জমজমের পানি। এ কূপের পানি মানুষের প্রাণ ভরিয়ে দেয়। হৃদয়ে ছড়ায় প্রশান্তি। পবিত্র ওমরাহ করতে আসা বিশ্বের লাখ লাখ মুসল্লি ইফতারে জমজমের পানিতেই খুশি। জমজমের অশেষ কল্যাণ ও বরকতের কথা অনেক হাদিসে এসেছে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেছেন যে, জমজমের পানি হচ্ছে বরকতময় ও তৃপ্তিদায়ক। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজমের পানি। আমাদের প্রিয়নবি নিজহাতে জমজমের পানি উত্তোলন করতেন এবং পান করতেন। এ পানি শুধু তৃষ্ণাই নিবারণ করে না। এর মধ্যে ক্ষুধা নিবারণেরও যোগ্যতা আছে। মানুষের শরীরের স্বস্তিও প্রবৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে। এ ছাড়া জমজমের পানির বাহ্যিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। এ পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। জমজম কূপের আরও একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ থেকে লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করলেও পানিতে কখনো স্বল্পতা দেখা যায় না। আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, নবি করিম (সা.) বলেছেন, জমজমের পানি বরকতময়। তা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন: ইসলামে কি কোনো পোশাক নির্ধারিত আছে? 

আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন জমজম স্ট্যাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার আছে সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভের। জমজম কূপের পানির স্তর মাটি থেকে প্রায় ১০.৬ ফুট নিচে। কোনো কোনো সময় জমজমের পানি ৮ হাজার লিটার প্রতি সেকেন্ডে ২৪ ঘণ্টা ধরে পাম্প করা হয়। অবাক করা ব্যাপার, তখন পানির স্তর নেমে যায় ৪৪ ফুট নিচে। কিন্তু পাম্প বন্ধ করার মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে তা উঠে আসে ১৩ ফুট ওপরে। প্রতি সেকেন্ডে ৮ হাজার লিটার পানি পাম্প করার মানে হচ্ছে, একদিনে প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। তাই বিজ্ঞানীরা অবাক হন, কীভাবে ১১ মিনিটের মাথায় তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কম দিন তো হয়নি, সেই হজরত ইসমাইলের (আ.) সময়কাল থেকে পানি নির্গত হচ্ছে। সুবহান আল্লাহ!

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জমজমের পানি বিজ্ঞানি মাশারো ইমোটো জমজমের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, জমজম পানির মতো গুণ ও বিশুদ্ধতা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে পাওয়া যাবে না। তিনি জমজমের পানি পরীক্ষা করতে নানো নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এর দ্বারা জমজম পানির ওপর গবেষণা করে দেখতে পান যে, যদি জমজম পানির এক ফোঁটা সাধারণ পানির এক হাজার ফোঁটায় মিশ্রিত হয়, তবু সাধারণ পানি জমজম পানির সমান গুণ লাভ করতে পারবে না। জমজম পানির প্রতি ফোঁটায় এই পরিমাণ খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা অন্য কোনো পানিতে পাওয়া যাবে না। তিনি আরও পরীক্ষা করে দেখতে পান, জমজম পানির গুণ বা উপকরণ পরিবর্তন করা যায় না। এমনকি তিনি জমজম পানির পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ছিল পানি। তিনি আরও দেখতে পান, যদি নিয়মিত এ পানির ওপর কোরআন পাঠ করা হয়, তাহলে এটি সব ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষমতা লাভ করে। সুবহান আল্লাহ ! নিশ্চয়ই আল্লাহর এটি একটি বিশেষ কুদরত। চলছে হজের মৌসুম। হাজিরা রবের প্রেমে ছুটে চলছেন কাবার পানে। ধন্য হচ্ছেন অফুরন্ত কল্যাণের বারিধারায় অবগাহন করে। চোখ শীতল করছেন মহান আল্লাহর অনন্য সব নিদর্শন দেখে।

আরও পড়ুন: ইসলামে দেনমোহর কার অধিকার? 

জমজম কূপের ফজিলত ইবনে মাজাহ শরীফে একটি হাদিস উল্লেখ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবেন, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এ পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পান করার সময় এ দোয়া পড়া যেতে পারে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফেয়া, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া ওয়া শিফায়ান মিন কুল্লি দায়িন। অর্থ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, ওলামায়ে কেরাম ও আল্লাহ ভীরু মুমিনরা জমজম পানের সময় বিভিন্ন নিয়ত করতেন। যা পূরণ হওয়ার অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান।

জমজমের পানি মহান আল্লাহর মহান নিয়ামত। সুবহান আল্লাহ! এ পবিত্র পানি পান করে মনে প্রশান্তি লাভ করে কলিজা জুড়ায় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। মনের অজান্তে জমজমের মালিকের প্রশংসায় বলে ওঠেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে আপনার মকবুল বান্দার অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এসইউ/জিকেএস

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।