বরিশাল নগরীর বটতলা বাজারে একটি কুকুর জবাই করে মাংস হিসেবে বিক্রির পূর্বেই স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত। জবাইকৃত কুকুরটি উদ্ধার করেছে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্যরা। এ ঘটনায় পশু আইনে কোতয়ালী থানায় তাবাস্সুম নামের একজন ডাক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ।এদিকে বটতলা মাংস বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। অভিযুক্ত রায়হান মোল্লা বটতলা এলাকার বাসিন্দা। সে বটতলা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। বটতলার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার বিকালে বটতলা বাজারের মাংস বিক্রির দোকানের পেছনে নিয়ে মাংস কাটার রামদা দিয়ে কুকুরটিকে জবাইয়ের চেষ্টা চালায় রায়হান।
একপর্যায়ে কুকুরটি তার হাত থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় কুকুরটির গলা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। বটতলা এলাকার অলিগলি দৌড়ে হালিমা খাতুন স্কুল সংলগ্ন এলাকার গলিতে গিয়ে কুকুরটি পড়ে যায়। এরপর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারের সদস্যরা এসে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তার আগে কুকুরটি মারা যায়। পরে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা রায়হানকে আটকে অভিযান চালালেও সে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, জবাই করে চামড়া ছাড়ানোর পর তা কুকুর না ছাগল কেউ বলতে পারবে না। তাদের ধারণা, কুকুরটি জবাই করে ছাগলের মাংস হিসেবে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল রায়হানের। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তারা।
অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্য সৈয়দ রিমেল জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি ট্রিপল নাইনে ফোন দেন। সেখান থেকে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের অবহিত করা হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন শেষে রায়হানের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু রায়হান পালিয়ে থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি কুকুরটি মারা গেছে। পরীক্ষা করে বুঝতে পারি, কুকুরটিকে কোনও পেশাদার লোক জবাই করেছে। শ্বাসনালি কেটে যাওয়া এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কুকুরটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।’ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। বটতলা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ‘যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আমরা চিনি না।
এ ঘটনায় বটতলা বাজারের বিশেষ করে মাংস বিক্রেতারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রেতারা যাতে কোনোভাবে আমাদের ভুল না বোঝে এ জন্য পুলিশের নিকট প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনপূর্বক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সাবু বিন ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত রায়হানের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত রায়হান মোল্লা বটতলা এলাকার বাসিন্দা, সে বটতলা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো।
এদিকে বটতলা বাজারের মাংসবিক্রেতা সাইদ বলেন,রায়হান বিভিন্ন সময় পশু-পাখি জবাই করেন। ধারাবাহিকতায় বাজারে এসে একটি কুকুর জবাই করছে। ঠিকমতো জবাই না করায় কুকুরটি নিয়ে যাওয়ার সময় পালিয়ে যায়।
সাইদ বলেন, বাসায় নিয়ে কুকুর মাংস কোথায় দেয় কিনা আমরা জানি না। অপরদিকে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। গরু ও খাসির মাংসের দোকানগুলোতে বাজার মনিটরিং বাড়ানোর দাবি তাদের। আর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ।বিষয়টি তদন্ত করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাইদ বলেন, রায়হানের সঙ্গে বাজারের কোনো ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনি ঘটনার মূল রহস্য উদ্ধারসহ জড়িত রায়হানের শাস্তি দাবি করেন।
একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন ওই কুকুর জবাই করে চামড়া ছাড়ানোর পর তা কুকুর না ছাগল কেউ বলতে পারবে না। তাদের ধারণা কুকুরটি জবাই করে ছাগলের মাংস হিসেবে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল রায়হানের। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তারা।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিচুল হক বলেন, খবর পেয়ে অভিযুক্ত রায়হানের বাড়িতে আমরা অভিযান চালায়। তবে তাকে পাইনি। সে বটতলা বাজারের একটি মাংসের দোকানের কর্মচারী। সে ওই এলাকার দিলবাগ গলির বাসিন্দা মিন্টু মোল্লার ছেলে। এ ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাকিল/সাএ