কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম,কোন মেস্তরি নাও বানাইল কেমন দেখা যায়,গ্রামের নও জোয়ান হিন্দু মুসলমানসহ কাল জয়ী অসংখ গানের রচিয়তা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।
তিনি ১৯১৬সালে আজকের এই দিনে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নেট উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিন ব্যাপী লোক উৎসব চলছে শুরু হয়েছে তার জন্ম ভূমি উজানধল গ্রামের মাঠে।
বৃহস্পতিবার(১৫ ফেব্রুয়ারি)সন্ধ্যা ৭টায় শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব ২০২৪ এর উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী ।
সাধরায় সংস্কৃতির বিকাশ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দল শাহ আব্দুল করিম পরিষদ,ধল গ্রমাবাসীর উদ্যোগে ও বিকাশের আর্থিক সহযোগিতায় উজান ধল গ্রামের মাঠে এই উৎব চলছে, চলবে ভোররাত পর্যন্ত। এরপর শুক্রবার বিকাল ৪ টায় থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান চলবে পরদিন ভোররাত পর্যন্ত।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি ও করিমপুত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা পারমিতা দাসের পরিচালনায় উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার,সহকারী কমিশনার ভুমি জনি রায়,মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন কবির,তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ,কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরার হোসেন,সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক,আবদাল আলম চৌধুরী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দ্রুপদ চৌধুরী নুপুর।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় বাউল গানের অনুষ্ঠান গানে গানে শাহ আব্দুল করিম। এতে গান পরিবেশন করেন বাউল আব্দুর রহমান, রনেশ ঠাকুর,সিরাজ উদ্দিন,সুর্যলাল দাস,শাহাব উদ্দিন,আশিক,কাজী সোহেল,পাগল হাসান, আশিক সরকার,বাউলিয়ানা ফয়সল, সাজ্জাদনুর,লাভলী দে,শারমিন আক্তার, প্রাণকিষ্ঞ,সৌরভ সুহেলসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দকে।
উল্লেখ,আজকের এই দিনে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান বিবি। জীবন্ত কিংবদন্তি এই গুণী মানুষ ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পুর্বে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এতে তিনি বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষাভাষী পৃথিবীর মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। অর্জন করেন একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।
আব্দুল করিম চরম দারিদ্র্য ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বেড়ে ওঠা সংগীত সাধনার শুরু ছেলে বেলা থেকেই। তিনি বাংলার লোকজ গানের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন সহজ ভাবে। গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান। ভাটি অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ,প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁর গানে উঠে এসেছে মানবতার জয়গান। গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন সমাজের কুসংস্কার ও ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য অনেক লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন,কাগমারী সম্মেলন,ভাষা আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ,স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যুগিয়েছে তার গান। তাছাড়া সমাজের সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও রচিত করেছেন অসংখ্য গান।