সব থাকার পরও আজ দু’দিন আমরা না খেয়ে আছি। ঘরের ভীটার উপর দিয়ে বয়েগেছে পানির ঢেউ। চুলাভর্তি পানি। নেই রান্নার সুযোগ। খাবারের জন্য ছেলে-মেয়েদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না। নিচে জোয়ারের পানির সাথে মাথার উপর ঝরতে থাকা অবিরাম বৃষ্টিতে আমরা অসহায় হয়ে পরেছি। তাই একটু খাবারের জন্য ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়েছি। চর মানিকা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ফাতেমা, রিপাদের মতো চরফ্যাসনের বিভিন্ন গ্রামের দুর্গত মানুষের কষ্টের প্রকাশ এমনই।
মঙ্গলবার দুপুরে জাহানপুর, মানিকা, চরকলমী, নজরুল নগর এবং আবদুল্লাহপুরের দুর্গত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের জন্য অভুক্ত দুর্গত মানুষের ভীর দেখা গেছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে প্যাকেটভর্তি শুকনো খাবার নিয়ে মূল ভূ-খণ্ডের এসব দুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে ছুটে গেছেন ইউএনও নওরীন হক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দূরবর্তী ঢালচর, পাতিলা, মুজিব নগর ইউনিয়নসহ মূল ভূ-খণ্ডের বেড়িবাধেঁর বাহিরের মেঘনা, তেতুলিয়া এবং মায়ানদীর কূলের বসতিগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী এখানে ৬ হাজার বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরের ভেতর দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি বয়েগেছে। ঘরটা প্লাবিত হওয়ায় পাশাপাশি ভারীবর্ষণের কারণে বেশির ভাগ পরিবারে রান্নার চুলা জ্বালানো যায়নি। ফলে সবকিছু থাকার পরও পরিবারগুলোতে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন গ্রামের দুর্গত মানুষের মধ্যে জরুরীখাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জাহানপুরের তুলাগাছিয়া, যমুনা আবাসন, কবি মুজাম্মেল হক আবাসন, শের ই বাংলা আবাসন, বেগম রোকেয়া আবাসন, শুরভী গুচ্চগ্রাম, কর্ণফুলি গুচ্চগ্রাম, আটক পাট কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত গুচ্ছগ্রাম, চর মণিকার মাহবুবা আবাসনসহ বেড়িবাধেঁর ঢালের ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত খাদ্য বিতরণ অব্যাহত আছে।
শুকনো খাবার বিতরণকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসর নওরীন হক দুর্গতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, প্রত্যেক দুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। একজন দুর্গত মানুষ ক্ষুধার্ত থাকাকালে আমি ঘরে ফিরছি না। দুর্গত কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। সকলের মুখে খাবার তুলে দেয়াড় জন্য সরকারের তরফ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সালাউদ্দিন/সাএ